নিজস্ব প্রতিনিধি: এ যেন প্রফেসর শঙ্কুর ‘হাইলি সাস্পিশিয়াস ভ্যানিশ’। পার্থক্য একটাই ভাল কাজের জন্য নয়, প্রতারণা করতে চাওয়া। আর এই লোক ঠকাতে গিয়েই যুবক ধরা পড়ল পুলিশের জালে। আর ঠাঁই হল শ্রীঘরে। তবে টাকা হাতানোর পদ্ধতি শুনে এলাকায় ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। ভয় পাচ্ছেন এলাকাবাসীরাও। ধৃতকে জেরা করা হচ্ছে।
চেকে লেখা হচ্ছে টাকার (Money) অঙ্ক। আর কিছুক্ষণ পরেই মুছে যাচ্ছে সেই লেখা। এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই টাকা হাতাতে চেয়েছিল প্রতারকরা। আসলে পেনে ব্যবহার করা হত ভ্যানিসিং কালি। আর তা দিয়েই করা হত জালিয়াতি। গ্রাহকের লেখা সামান্য টাকার পরিমাণ মুছে যেত অল্প সময় পরেই। সেখানে প্রতারকরা লিখে ফেলতেন বহু টাকার অঙ্ক। এভাবেই ফাঁকা করে দেওয়া হত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
ঋণ দেওয়ার নাম করে নামী ফাইন্যান্স কোম্পানির (Finance Company) নাম ভাঁড়িয়ে ফোন করা হয় ব্যবসায়ী গোপাল দাসকে। তাঁর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদার বাইটগড়ে। লোন দেওয়ার কথা বলা হয় তাঁকে। প্রতারকদের টোপ, ব্যাপক ঋণ নিলেও প্রসেসিং চার্জ হিসেবে নেওয়া হবে মাত্র ১৫০ টাকা। দুঁদে ব্যবসায়ী গোপাল বাবু। বিষয়টি যাচাই করতে তিনি ফোন করেন ওই ফাইন্যান্স কোম্পানির অফিসিয়াল নম্বরে। তখনই জানতে পারেন। ব্যবসায়ীর ওই এলাকায় এধরণের কোনও ঋণ দেওয়া হচ্ছে না আদৌ।
গোপাল বাবু সব জেনেও চুপ থাকেন। এরপর প্রতারকরা এক যুবককে পাঠায় ওই ব্যবসায়ীর কাছে। চাওয়া হয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সহ একাধিক ডকুমেন্ট,প্যান কার্ড এবং দুবছরের ইনকাম ট্যাক্স ফাইল। সেই সঙ্গে ১৫০ টাকা প্রসেসিং ফি দাবি করে চেক চাওয়া হয়। নিজের পেন দিয়ে তা লিখতে যান ওই ব্যবসায়ী। অভিযোগ, তখনই বাঁধা দিয়ে ওই যুবক এগিয়ে দেয় একটি পেন। বলে এতেই সই করতে হবে। সেই পেনে সই করার জন্য রীতিমত জোরাজুরি এমনকি হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।
এরপর স্থানীয় থানায় ফোন করেন ব্যবসায়ী। পুলিশ (Police) এসে প্রথমে ওই যুবককে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেফতার করা হয় তাকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের কাছ থেকে একাধিক জাল পরিচয়পত্র, কাগজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ভ্যানিসিং কালি দিয়ে এই দুর্নীতি করা হচ্ছিল। পরিষেবা নিতে গিয়ে কেউ সেখানে সামান্য টাকার অঙ্ক লেখার কিছুক্ষণ পরেই সে কালি মুছে যেত। তার বদলে লিখে নেওয়া হত মোটা টাকার পরিমাণ। এভাবেই এলাকায় আরও ৬ জনকে প্রতারিত করা হয়েছে। অভিযুক্ত যুবক জানায়, তাকে কোম্পানি থেকে বলা হয়েছিল ওই পেন দিয়েই সই করাতে। জানা গিয়েছে, ধৃত যুবকের বাড়ি কলকাতার সল্টলেকে। এই চক্রে আর কে কে জড়িত ও কোথায় কতজনকে এভাবে প্রতারণা করা হয়েছে, তা জানতে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।