নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকার বাংলার(Bengal) জন্য ১০০ দিনের কাজের টাকা আর আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখে দিয়েছে। রাজ্যের তরফে বার বার সেই টাকা চাওয়া হলেও কেন্দ্র তা পাঠায়নি। যদিও বাংলার ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে না থেকে বাংলার প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে তাঁদের বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছেন। অনেকেই ভেবেছিলেন এই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার ঘোষণা শুধু মুখের কথা হয়েই থেকে যাবে। তাঁদের সেই ধারনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee) একযোগে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী জনসভা থেকে জানিয়ে দিচ্ছেন, আবাস যোজনায় যারা এখনও টাকা পায়নি, সেই ১১ লক্ষ মানুষের বাড়ি রাজ্য সরকারই বানিয়ে দেবে। চলতি বছরেই তাঁরা সেই টাকা পেয়ে যাবেন। মমতা-অভিষেকের এই ঘোষণা গ্রাম বাংলার বুকে মানুষের মনে নতুন করে বল এনে দিয়েছে। তাঁরা নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। আর তার জেরেই চাপে পড়ে গিয়েছে পদ্ম শিবির থুড়ি বিজেপি(BJP)।
দীর্ঘদিন ধরে আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখে ২০২২ সালের নভেম্বরে গোটা রাজ্যে প্রায় ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতেই টাকা পাঠানোর কথা ছিল কেন্দ্রের। মার্চের মধ্যেই বাড়ি তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কেন্দ্রের ঘোষণায় কিছুটা আশার আলো দেখতে শুরু করেছিলেন বাংলার আবাস উপভোক্তারা। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে দেয় কেন্দ্র। আটকে দেওয়া হয় বাংলার হকের টাকা যার পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি। কিন্তু কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে আর বসে থাকতে চাননা মুখ্যমন্ত্রী। তাই রাজ্য সরকারই নিজে উদ্যোগ নিয়ে যেমন ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিয়েছে, তেমনি আবাস যোজনার মাধ্যমে গৃহহীনদের মাথায় পাকা ছাদ তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। অভিষেক প্রথমদিকে একাধিক সভায় জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই বাংলার ১১ লক্ষ আবাস উপভোক্তা তাঁদের বাড়ি করার জন্য প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে যাবেন। সম্প্রতি মমতা জানিয়েছেন, ডিসেম্বর অবধিও অপেক্ষা করতে হবে না, ভোট মিটলে জুনেই পেয়ে যাবেন বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা।
মমতার এই ঘোষণাই এখন বাংলার বুকে রীতিমত চাপে ফেলে দিয়েছে বিজেপিকে। এমনিতেই ১০০ দিনের কাজের টাকা না দিয়ে গ্রাম বাংলার জনতার কাছে বিরাগভাজন হয়ে উঠেছে বিজেপি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আবাসের টাকাও আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। আর তার জেরে কার্যত বিজেপির বিরুদ্ধে ফুঁসছে গ্রাম বাংলা। মমতার ঘোষণা এই ক্ষুব্ধ মানুষগুলিকেই নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। জুন মাসের মধ্যেই আবাসের টাকা দেওয়ার যে ঘোষণা মমতা করেছেন, তা কার্যত রাজ্য রাজনীতিতে মাস্ট্রারস্ট্রোক হয়ে উঠছে। মমতার এই ঘোষণায় রীতিমত চাপে পড়ে গিয়েছে বিজেপি। কেননা পদ্মের নেতারা যখনই দাবি করছেন, মমতার ঘোষণা মিথ্যা, তখনই তাঁদের পাল্টা শুনতে হচ্ছে, ‘দিদি যে কথা দেন, সেই কথা তিনি রাখেন। ১০০ দিনের কাজের টাকা দিয়েছেন, বাড়ি তৈরির টাকাও দেবেন।’ গ্রাম বাংলার মানুষের মমতার প্রতি, তাঁর সরকারের প্রতি, তাঁর দলের প্রতি এই আস্থাই বিজেপির পায়ের নীচে মাটি কেড়ে নিয়েছে। পদ্মের নেতারাদের কার্যত্য একান্তে স্বীকার করতে হচ্ছে, ১০০ দিনের কাজের টাকা আর বাড়ি তৈরির টাকা আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। এই সিদ্ধান্ত গ্রাম বাংলায় বিজেপিকেই ডুবিয়ে দিচ্ছে।