-273ºc,
Tuesday, 30th May, 2023 12:34 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি: পাহাড়ে আবারও পরিস্থিতি জটিল করার পথে হাঁটা দিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার(GJMM) সুপ্রিমো বিমল গুরুং(Bimal Gurung)। শনিবার তিনি জিটিএ(GTA) নির্বাচন(Election) স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়ে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Mamata Banerjee)। সেই চিঠিতে তিনি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চাওয়ার পাশাপাশি ২০১১ সালের চুক্তি অনুযায়ী স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান চেয়ে আরও বেশি ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে গোর্খা অধ্যুষিত উত্তরবঙ্গের ৩৯৬টি মৌজাকে জিটিএ’র অধীনে আনার দাবি জানিয়েছেন। যদিও মোর্চা বাদে পাহাড়ের বাকি দলগুলি দ্রুত জিটিএ নির্বাচন চাইছে। তাই মনে করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফে এখুনই এই চিঠিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে নাও দেখা হতে পারে। এর পিছনে বাড়তি কারণ হিসাবে উঠে আসছে পাহাড়ের সাম্প্রতিক কালের নির্বাচনে মোর্চার চূড়ান্ত ব্যর্থতা যা বলে দিচ্ছে পাহাড়ে জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ হারাচ্ছেন গুরুং।
রাজ্য সরকার চাইছে, পাহাড়ে বর্ষা নামার আগেই জিটিএ বা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনসস্ট্রেশনের ভোট করিয়ে নিতে। কেননা প্রায় ৫ বছর ধরে কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ছাড়াই জিটিএ পরিচালিত হচ্ছে রাজ্য সরকার মনোনিত প্রশাসকের মাধ্যমে। ২০১৭ সালে গুরুংই জিটিএ নির্বাচনের বিরোধিতা করেছিলেন। সাফ জানিয়েছিল, তাঁরা পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য চান। জিটিএ সাময়িক ব্যবস্থা মাত্র। তাই সেই সময়ে জিটিএ’র নির্বাচন হয়নি। যদিও রাজ্য সরকার পাহাড়ের উন্নয়ন যাতে থমকে না যায় তার জন্য প্রশাসক বসিয়ে জিটিএ’র কাজ চালিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এখন গুরুং সরাসরি আর পৃথক রাজ্য চাইছেন না। বরঞ্চ চাইছেন অধিক ক্ষমতাসমপ্নন জিটিএ। গুরুংদের দাবি, ২০১১ সালের চুক্তি মোতাবেক রাজ্য সরকার যে সব ক্ষমতা জিটিএ’র হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেছিল তার অধিকাংশই এখনও জিটিএ’র হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। সেই সব ক্ষমতা আগে জিটিএ’র হাতে তুলে দেওয়া হোক। তারপর যেন জিটিএ’র নির্বাচন করানো হয়। এমনকি তিনি এটাও জানিয়েছেন তিনি বা তাঁর দল এখন আর বিজেপি’র সঙ্গী নন। তাঁরা এখন তৃণমূলের জোটসঙ্গী। তাই তৃণমূল যেন এই জোট সম্পর্ক বজায় রাখে ও জিটিএ নির্বাচন এখনই না করিয়ে পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করার দিকে নজর দেয়।
ঘটনা হচ্ছে ২০১৭ সালের পাহাড়ের পরিস্থিতি আর ২০২২ সালের পাহাড়ের পরিস্থিতি সমান নয়। আরও বলা ভাল ২০১৭ সাল;এর গুরুং আর ২০২২ সালের গুরুংয়ের মধ্যে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কেননা ২০১৭ সালে পাহাড়ে শেষ কথাই ছিলেন গুরুং। কিন্তু এখন সেই পাহাড়েই তাঁর আর কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা অবশিষ্ট নেই। বরঞ্চ গুরুংয়ের একসময়কার সব সঙ্গীরাই এখন নিজ নিজ দল গড়ে পাহাড়ের রাজনীতিতে চমক দেখাচ্ছেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচন হোক কী সাম্প্রতিক কালে হয়ে যাওয়া দার্জিলিং পুরসভার নির্বাচন, কোথাও দাগ কাটতে পারেনি গুরুংয়ের দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। এই অবস্থায় জিটিএ-তে ভোট হলে সেখানেও যে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা মুখ থুবড়ে পড়বে সেটাও অনেকেই বুঝতে পারছেন। আর সেটা হলে পাহাড়ের রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা থাকবে না গুরুংয়ের সামনে। সেই কারণেই এখন জিটিএ নির্বাচন স্থগিতের আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন বিমল গুরুং। যদিও তাতে চিঁড়ে ভেজার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। শুধু জিটিএ নয়, পাহাড়ের আরও ৩টি পুরসভার নির্বাচন দ্রুত সেরে ফেলতে চায় রাজ্য সরকার। সঙ্গে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনও।