নিজস্ব প্রতিনিধি: উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার(Bengal) বুকে জঙ্গলমহলের(Jungalamahal) ৫ আসনেই ফুটেছিল পদ্মফুল। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম, সব জায়গায় জিতেছিল বিজেপি(BJP)। সেই জয়ের নেপথ্য ছিল কুড়মি সমাজের(Kurmi Society) সমর্থন। কেননা তাঁদের বোঝানো হয়েছিল, বিজপি জিতলে কুড়মিদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হবে। তাঁদের আদিবাসী রূপে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কিন্তু সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় ২৪’র ভোটে আর বিজেপির পাশে থাকছে না কুড়মিরা। পরিবর্তে এবার কুড়মি নেতারা জঙ্গলমহলের একাধিক আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা বিজেপির রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে সুরজিৎ সিং কারমালির নাম ঘোষণা করেছে কুড়মি সমাজ। পুরুলিয়ার কুড়মি প্রার্থী হিসাবে আগেই আদিবাসী কুড়মি সমাজের মুখ্য উপদেষ্টা অজিতপ্রসাদ মাহাতোর নাম ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে আগেই। খুব শীঘ্রই ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের জন্যও তাঁরা প্রার্থী ঘোষণা করে দিতে চলেছে।
কুড়মিদের এই সিদ্ধান্ত যে বিজেপির হাত থেকে জেতা আসন ছিনিয়ে নেওয়ার সামিল সেটা সবাই জানেন ও বোঝেন। এই অবস্থায় বিজেপিকে আরও বড় অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন দলেরই কুড়মি নেতা তথা পুরুলিয়া জেলার জয়পুরের বিজেপি বিধায়ক নরহরি মাহাত। তিনি কার্যত স্বীকার করেই নিয়েছেন, কুড়মিদের পৃথক প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিজেপির বিরুদ্ধে যেতে চলেছে। তিনি জানিয়েছেন, ‘এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি সমর্থক কুড়মিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁরা যাতে বিভ্রান্ত হন সেই পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। এটা রুখতে হবে। প্রয়োজনে কুড়মি অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে বিজেপি কর্মীদের গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নের কথা প্রচার করতে হবে। আমি নিজে কুড়মি। কিন্তু আমি বিজেপি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। শুধু কর্মীরা ভোট দিয়ে আমাকে ভোটে জেতাননি। সর্বস্তরের মানুষ ভোট দিয়েছেন। তাই ভোটে জিতেছি। পুরুলিয়া জেলাতে এরকম জাতিগত সমীকরণের বিভাজন বিগত দিনে হয়নি। এবার যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তার মূল লক্ষ্যই হল যে সমস্ত কুড়মিরা বিজেপিকে সমর্থন করেন তাঁদের বিভ্রান্ত করা।’
কুড়মিদের এই পৃথক লড়াই করার সিদ্ধান্ত গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও দেখা গিয়েছিল। তাতে দেখা যায় খোদ কুড়মি সমাজের মানুষেরাই কুড়মিদের পৃথক ভাবে দেওয়া প্রার্থীকে পুরুলিয়া জেলার ২-৩টি জায়গা বাদে আর কোথাও সমর্থন করেনি। সেই সুবাদে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলের ৪টি জেলায় বিজেপি যেমন মুখ থুবড়ে পড়ে তেমনি জয়জয়কার হয় তৃণমূলের(TMC)। মজার কথা কুড়মিদের আলাদা ভাবে লড়াই করা ও পৃথক প্রার্থী দেওয়ার ঘটনা বিজেপিকে যতটা ধাক্কা দিচ্ছে, ততটা ধাক্কা দিচ্ছে না তৃণমূলকে। বরঞ্চ অনেকেই মনে করছে, ৫ বছর আগে যে কুড়মি ভোটের দৌলতে বিজেপি জঙ্গলমহলের ৫ লোকসভা কেন্দ্রেই জয়ের মুখ দেখেছিল, এবার তাঁদের সেই জয় থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে। কিন্তু তৃণমূলের ভোট উনিশে যতটা না বেড়েছিল, তার থেকেও বেশি বেড়েছিল ২১’র ভোটে। ২৪’র ভোটেও সেই ভোটপ্রাপ্তির হার বাড়তে চলেছে তৃণমূলের। তাই কুড়মিদের পৃথক ভাবে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘাসফুল শিবিরে অন্তত কোনও প্রভাব ফেলবে না। অন্তত এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।