নিজস্ব প্রতিনিধি: ছিলেন বাম দলের কর্মী। হয়েছিলেন সাংসদও। সেই সঙ্গে হয়ে উঠেছিলেন রাজ্যের শিল্পবন্দর নগরী হলদিয়ার(Haldia) পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার শেষ কথা। তাঁর দাপটে কার্যত বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত বাম জমানায়। হয়েছিলেন দলের রাজ্য কমিটির সদস্য এবং হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানও। কিন্তু সেই দাপটেই ধাক্কা দিয়েছিল নন্দীগ্রাম। মানুষের গণআন্দোলন আর পরিবর্তনের ঝড়ে ছারখার হয়ে যায় তাঁর সাম্রাজ্য। যে বাম দল ছিল তাঁর মূল প্রতিষ্ঠা, সেই বাম দল সিপিআই(এম) তাঁকে বহিষ্কার করে দেয় দল থেকে। সেই থেকে কার্যত রাজনৈতিক পরিযায়ী নেতা হয়ে উঠেছেন তিনি। কেননা তাঁকে এখন আর কেউ দলে নিতে চাইছে না। সিপিএম তাঁকে দল থেকে তাড়িয়েছে রাজ্যে পরিবর্তনের পরে পরেই। ২০১৬ সালে তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। কিন্তু সেই বিজেপি তাঁকে তাড়িয়েছে ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি হয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রার্থী। কিন্তু সেখানেও বেশিদিন যায়নি তাঁর। আশা ছিল তৃণমূলে(TMC) ঢোকার ছাড়পত্র পাবেন। সেটাও মেলেনি। শেষে এবার আম আদমি পার্টিতে(AAP) যোগ দিতে চান তিনি, মানে লক্ষ্মণ শেঠ(Lakhsman Seth)।
নন্দীগ্রাম পূর্বোত্তর সময়ে লক্ষ্মণ শেঠের দাপট কার্যত রাজ্যের বাম নেতাদের কাছেও ইর্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তিনিই নন্দীগ্রামের বুকে গণহত্যা চালিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশেই চটি পরা পুলিশ গুলি চালিয়েছিল নিরীহ মানুষদের ওপর। যদিও কোনও অভিযোগই তাঁর বিরুদ্ধে মান্যতা পায়নি আদালতের কোনও মামলায়। সিবিআই তদন্তেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু মানুষের আদালতে তিনি আজও চূড়ান্ত ত্যাজ্য হয়ে রয়েছেন। তাই বাম দল ছেড়ে নিজ দল গড়েও কিছু করে উঠতে পারেননি। বার বার চেষ্টা করেছেন নিজ দাপট ফিরে পেতে। সেই সূত্রেই বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূলে তাঁর উঁকি মারা। কিন্তু ‘গণহত্যার নায়ক’কে কেউ দলে কদর দেয়নি আমজনতার বিষ নজরে পড়ার ভয়ে। এখন সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলে যোগদানের কোনও সম্ভাবনা না থাকায় আম আদমি পার্টিতে যোগ দিতে চান তিনি। লক্ষ্মণেই দাবি, তিনি বার বার আবেদন করছেন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু কোনও সাড়া পাননি। তাই পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল তাঁকে না নিলে তিনি আম আদমি পার্টিতে যোগ দিতে চান।
লক্ষ্ণণ শেঠের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে তৃণমূল অথবা আম আদমি পার্টির তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি এখনও। কিন্তু আপ সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘গণহত্যার নায়ক’কে দলে নিতে ইচ্ছুক নন বাংলার আপ নেতারা। কেননা সেক্ষেত্রে বাংলার মানুষ আপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। তাই লক্ষ্মণ চাইলেও কার্যত আপের দরজা বন্ধ থাকতে পারে তাঁর জন্য। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে যদি সেটাই হয় তাহলে কী করবেন তিনি? শেষে কী রাজনীতি থেকেই সন্ন্যাস নিতে হবে তাঁকে? নন্দীগ্রাম কেন বাংলার কেউই তাঁকে ক্ষমা কিন্তু এখনও করেননি।