নিসর্গ নির্যাস মাহাতো: এই গ্রামের নাম গোপালপুর। মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে। গোপগড়ের কাছেই। আগেই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সময় টা ১৯৪৯ (বাংলায় ১৩৫৬) দুর্ভিক্ষের আঁচ কমেনি তখনও। পাত্র পরিবারের ধর্মপ্রাণা গৃহবধূ গিরিবালা দেবী সামান্য খই দিয়ে বরণ করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহাপ্রভু মূর্তি। কী প্রসন্ন! স্বয়ং রাধা- কৃষ্ণ বিরাজ করছেন চৈতন্য মূর্তিতে। শুরু হয়েছিল কৃষ্ণ ভক্তের উপাসনা। গড়ে উঠছিল বারোয়ারি। পরে সেই বারোয়ারিকে স্থায়ী করা হয়।
তারপরে ১৩ বছর কেটে গিয়েছে। তখনও ফসলের আকাল। গ্রামবাসী কোনওদিনও আধপেটা তো কোনওদিনও অনাহারে। তখন দু’বেলা খাবার জোটা মানেই বিলাসিতা।
গৌরাঙ্গ এসেছেন। পাত্র বাড়িতে তিনি প্রতিষ্ঠিত। আর তাঁর উপাস্য দেবতার ভিন্নরূপের স্ত্রী’র আগমন হবে না! আকাল মেটাতে যে বিষ্ণু – জায়া দেবী লক্ষ্মীর আগমন হতেই হতো। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬২ সালে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন গিরিবালা পুত্র, বালক বলাই চন্দ্র পাত্র। আর তারপরেই বিগ্রহ গড়া হয় মহালক্ষ্মীর।
রাধিকা তো লক্ষ্মী। আর কৃষ্ণই যে স্বয়ং বিষ্ণু। কৃষ্ণের অবহেলাতেই বিরহে কাতর রাধা অভিশাপ দিয়েছিলেন, ‘পরের জন্মে তুমি, আমা-রাধিকার মতোই কৃষ্ণের বিরহ জ্বালায় পুড়বে’। তাইতো চৈতন্য “বনমালী তুমি, পরজনমে হইয়ো রাধা” হয়ে কৃষ্ণ প্রেমে পাগল ছিলেন।
যে চৈতন্যদেবের অন্তরে রাধা। বাহিরে কৃষ্ণ। তাঁর প্রতিষ্ঠা স্থানে লক্ষ্মী উপাসনা হলে দেবী স্বয়ং বিরাজ করবেন না তাই কি হয়! কল্পনা-বিশ্বাস-লোককথা যাই হোক সে বছরেই বৃষ্টি এল ঝমঝমিয়ে। ক্ষেতের পর ক্ষেতে চাষিদের উল্লাস আর কাজ। মজুররা দিন-রাত মজে। হাতে হাত লাগিয়ে গ্রামের গোলা ভরছে। দু’বেলা ভরপেট অন্ন। কর্মই যে ফল। কর্মই মহালক্ষ্মী।
পারিবারিক পুজো হলেও এই পুজো সর্বজনীন। আগে ২ দিন ধরে যাত্রাপালা বসত। মেলা বসত। আর হতো কীর্তন পালা। আশপাশের গ্রামের মানুষে ভরে থাকত প্রাঙ্গণ। এখনও ঐতিহ্য মেনে হয় সবকিছুই। তবে তা অনেকটাই ম্লান।
পুরানো দেবী মন্দিরকে নতুন করে গড়ে তোলা হয় ২০১৪ সালে ( ১৪২১বঙ্গাব্দ)। উপকথা আর বিশ্বাসে দেবী স্বমহিমায় অধিষ্ঠাত্রী নীচু গোপগড়ে।