নিজস্ব প্রতিনিধি: গেরুয়া শিবির থেকে মাঝেমধ্যেই অভিযোগ তোলা হয় বাংলায় ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার নাকি বাংলার আদিবাসীদের বঞ্চিত করেছে নানা সুযোগসুবিধা থেকে। সেই অভিযোগ কতটা ভাঁওতা তার প্রমাণ মিলল এবার ঝাড়গ্রামের(Jhargram) বুকে। সেখানে ৯টি লোধা শবর পরিবারের(Lodha Shabar Family) হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হল জবরদখল হয়ে যাওয়া জমি(Land)। হারানো জমি ফিরে পেয়ে খুশি লোধা-শবর পরিবারগুলি। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে ফেরত দেওয়া জমি দ্রুত ওই ৯টি পরিবারের নামে মিউটেশন করিয়ে দেওয়া হবে। জমি নিয়ে তাঁদের আর কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না বলে জেলা প্রশাসনের তরফে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম ব্লকের রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের(Radhanagar GP) কালীনগর এলাকায় বসবাস করা ওই ৯টি লোধা-শবর পরিবারের মোট আড়াই একর জমি রয়েছে। কীভাবে তাঁরা এই জমি পেয়েছিল তা জানতে গিয়ে সামনে এসেছে যে, বাম জমানায় ২০০৩ সালে মালতী মাহাতোর কাছ থেকে ওই আড়াই একর রায়তি জমি লোধা ডেভেলপমেন্ট স্কিমের মাধ্যমে কিনে নেয় রাজ্য সরকার। তারপর সেই জমি তুলে দেওয়া হয় ওই পরিবারগুলির হাতে। ঝাড়গ্রামের তৎকালীন বিডিও ওই জমি অনুকূল নায়েক, হীরা ভক্তা, কার্তিক ভক্তা, গণেশ ভক্তা, নিরাপদ ভক্তা, কৃষ্ণা ভক্তা ও সদন ভক্তার নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু সরকারি নিয়ম মেনে তাঁদের জমি হস্তান্তর করা হলেও সরকারি রেকর্ডে জমির মালিক হিসেবে মালতীর নামই থেকে যায়। সেই সুযোগ নিয়ে ২০২১ সালে এক জমি মাফিয়া ওই জমির ভুয়ো দলিল বের করে ধনঞ্জয় পাল নামে ঝাড়গ্রামের এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ। তার কয়েকমাসের মধ্যেই ধনঞ্জয় পাল জায়গাটি তাঁর ভাই ধনপতি পালকে দানপত্র করে দেন। তাঁরা প্রত্যেকে এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
এরপর দুই ভাই পরিকল্পনা করে জমিটি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ধনপতি ওই জায়গার রেকর্ড করে নেন। সুযোগ বুঝে ধনপতি ওই জায়গা লক্ষ লক্ষ টাকায় বিভিন্ন জনকে বিক্রি করে দেয়। ক্রেতাদের মধ্যে কিছু পুলিশকর্মীও রয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। একটি সংগঠনের তরফে অভিযোগ আসার পরই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। তদন্ত শুরু হওয়ার পর একের পর এক জালিয়াতির তথ্য সামনে আসে। ঘটনার তদন্তে নেমে মহকুমা শাসক বাবুলাল মাহাতর কাছে বিয়য়টি পরিষ্কার হয়। এরপর তিনি লোধা ও শবর পরিবারের হাতে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। বুধবার সেই জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয় ওই পরিবারগুলির কাছে। আর তার জেরে ফের খুশিতে ভরে গিয়েছে লোধা-শবর পরিবারগুলি। দখল হওয়া জমির অধিকার ফিরে পেয়ে তাঁরা রীতিমত খুশি।