নিজস্ব প্রতিনিধি: মা দুর্গার সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে পুজোর রীতি সর্বত্রই। তবে ব্যতিক্রমও আছে। এখানে এমন এক পুজোর সন্ধান দেব যেখানে গত দেড়শো বছর ধরে দুর্গাপুজো করা হয় আদিবাসী মন্ত্রের মাধ্যমে। হ্যাঁ সেটাও আবার এই বাংলাতে(Bengal)। উত্তরবঙ্গের(North Bengal) মালদা(Malda) জেলার হবিবপুর থানার(Habibpur PS) কেন্দপুকুর এলাকার আদিবাসী অধ্যুষিত ভাঙাদিঘি গ্রামে(Bhangadighi Village) আজও নিষ্ঠা ভরে পালন করে আসছেন গ্রামের মানুষজন। পুরোহিতের মন্ত্রে নয়, আদিবাসীদের(Tribal People) নিজস্ব মন্ত্রেই নিষ্ঠার সঙ্গে এখানে পূজিত হন মা দুর্গা। গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায় মানুষ নিজের ভাষায় মন্ত্র পাঠ করে মা দুর্গাকে অঞ্জলি দেন। গ্রামের মধ্যে রয়েছে ছোট্ট একটি টিনের ঘর। সেই ঘরের মধ্যে রয়েছে এই মা দুর্গার বেদী। সেখানেই দীর্ঘদিন ধরে এই পুজো হয়ে আসছে।
জানা গিয়েছে, গ্রামের বাসিন্দা লব হাঁসদা শুরু করেছিলেন এই পুজো। স্বপ্নাদেশ পেয়েই নাকি দেবী দুর্গার পুজো শুরু করেছিলেন লব হাঁসদা। তবে তা শুরু হয়েছিল ওপার বাংলায়। তখনকার পূর্ব বাংলার রাজশাহী জেলার নাচোল থানার হাকরোল গ্রামে পুজোটি শুরু হয়েছিল পারিবারিক ভাবেই। দেশভাগের পরে সেই পুজো চলে আসে মালদার বুকে ভাঙাদিঘি গ্রামে। সেই গ্রামে তখন কোনও পুজো হতো না। গ্রামের মানুষ জানতো না পুজো কাকে বলে। সেই কারণেই পারিবারিক পুজোকে গ্রামের পুজোয় রূপান্তরিত করা হয়। গ্রামের মানুষ যাতে পুজোর মন্ত্র বুঝতে ও তা বলতে পারে সেই জন্যই আদিবাসী মন্ত্রেই দেবী দুর্গার পুজো শুরু হয়। এখন সেই গ্রামে প্রায় ২০০ পরিবারের বসবাস। প্রতি বছর তাঁরা পুজোর ৪টে দিনের জন্য অপেক্ষা করেন। ধূমধাম করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের নিয়ম-নীতি মেনে দেবীর আরাধনা করা হয়।
পুজোর চার দিন এখানে পংক্তি ভোজনের আয়োজন করে থাকেন আদিবাসী সমাজের মানুষেরা। তবে পুজোর চারদিনই নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে। নবমীতে খিচুরি ভোগ করা হয়। ব্রাহ্মণ পুরোহিতের বদলে একজন প্রবীণ আদিবাসী তাঁদের নির্দিষ্ট ধর্মীয় রীতি মেনে দেবী দুর্গাকে পুজো করেন। গোটা এলাকার মানুষ এগিয়ে আসেন এই পুজো উদযাপনে। আদিবাসী সমাজের মানুষজন পুজোর চারদিন মায়ের আরাধনায় ব্যস্ত থাকেন। গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এই দেবী খুবই জাগ্রত। সকলের মনোবাঞ্ছা তিনি পূরণ করেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।