নিজস্ব প্রতিনিধি: বীরভূম জেলার রামপুরহাট(Rampurhat) থানার বকটুই(Boktoi) গ্রামে যে নৃশংস ঘটনা ঘটে গিয়েছে তা নিয়ে এবার রাজ্যের বিরোধীদের একহাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। একসঙ্গে জানিয়ে দিলেন এই ঘটনার পিছনে বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। আদালতের নির্দেশে সিবিআই(CBI) এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে, করুক। কিন্তু সিবিআই যদি বিজেপির কথামতো চলার চেষ্টা করে বা তাঁদের পছন্দমতন তদন্ত করে তাহলে তিনি রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করবেন বলেও এদিন হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলেন।
রবিবার কলকাতা থেকে বিমানযোগে বাগডোগরা যান মুখ্যমন্ত্রী। তারপর সেখানে থেকে সড়কপথে গোঁসাইপুর। সেখানে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সেই মঞ্চ থেকেই বকটুই নিয়ে বিরোধীদের(Opposition) তীব্র আক্রমণ শানেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘যখন কেউ কাজ করতে পারে না, তখন হামলার পথ বেছে নেয়। রামপুরহাটে একটা ঘটনা ঘটেছে। খুবই খারাপ ঘটনা। কেউ সমর্থন করবে না। সবটাই খারাপ। কিন্তু ঘটনাটা তো আমরা ঘটায়নি। খুন হল তৃণমূল। আগুন লাগল যাদের বাড়িতে তাঁরাও তৃণমূল। আর তৃণমূলকেই গালি দেওয়া হচ্ছে। তা হলেই বুঝুন, আমার হাত কাটল, আমার পা কাটল, আমার মাথা কাটল, আর আমাকেই গালাগাল দিচ্ছে। হ্যাঁ, পুলিশের ভুল ছিল। খুনের পর ওদের আশঙ্কা করা উচিত ছিল কিছু একটা হতে পারে। তাই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। আমরা অ্যাকশান নিয়েছি। ওসি, এসডিপিও-কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২২জন গ্রেফতার হয়েছে। তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা গ্রেফতার হয়েছে সবাই তৃণমূল কংগ্রেসের। দু’একটা দুষ্টু গরু সব জায়গায় থাকে। কিন্তু আমি মাফ করব না। এমন ঘটনা আমি কখনও মাফ করব না।’
এরপরেই বিরোধী শিবিরকে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিনদিন আগে ১০ জন বাইরে পুড়ে মারা গেল। খুন, মৃত্যু সবটাই খারাপ। আমি সমর্থন করছি না। বিহারে বডি এল। কোনও চ্যানেল তো কথা বলল না। কীভাবে পুড়ে মারা গেলেন, সত্যি পুড়ে মারা গেলেন নাকি পুড়িয়ে দেওয়া হল তা নিয়ে তো কোনও কথা হল না? কেরল থেকে ছ’দিন আগে চারটে দেহ এল। কই সিপিএম নেতারা কিছু তো বললেন না? খালি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালাগাল দেওয়া কাজ হয়েছে? কী কংগ্রেস নেতারা, আপনাদের রাজ্য থেকে ফিরে আসছে মৃতদেহ কোনও কথা নেই? বিজেপি ভুলে গেছে কাশ্মীর থেকে মুর্শিদাবাদে ফিরে এল আপেলের চাষ করতে যাওয়া একটার পর একটা মৃতদেহ। কখনও মুর্শিদাবাদে এসেছে, কখনও মালদহে এসেছে, কখনও নদিয়ায় এসেছে। তারপর তো পরিবারগুলোর দিকে ফিরেও তাকাওনি।আমার মুখে কালি লাগিয়ে মিছিল করছে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি। তোফা হয়ে সোফায় বসে রয়েছে।’
এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি অভিযোগ তোলেন ডেউচা-পাঁচামি আটকাতেই রামপুরহাটের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আর সবটাই হয়েছে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘ডেউচা-পাঁচামি আটকাতে বকটুইয়ে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। পুলিশকে দায়ী করা হচ্ছে। দেউচা পাঁচামি হলে বহু কর্মসংস্থান হবে। এক লাখ কর্মসংস্থানের কথা ঘোষণা করেছি। সে কারণেই হিংসা থেকে এই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। আমরা চাইছি বীরভূমে ১ লক্ষ ছেলে মেয়ের চাকরি হোক। তাই ডেউচা-পাঁচামি করছি। আর আপনারা রামপুরহাট করে দিচ্ছেন। কারণ ডেউচা যাতে না হয়, ছেলেমেয়েরা যাতে চাকরি না পায়। উদ্দেশ্য একেবারে স্পষ্ট। আমি এখনও বলছি রামপুরহাটের ঘটনার পিছনে বড় ষড়যন্ত্র আছে। ষড়যন্ত্র করেই করা হয়েছে। আমরা চাই এর বিচার হোক। ঘটনা ঘটার পর আমাদের সিট অনেক কাজ করেছিল। সিবিআই করেছে, ভাল করেছে। সিবিআই কাজটা করুক, আমাদের সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু এটা না করে যদি বিজেপির কথামত অন্য কাজ করতে যায়, তা হলে রাস্তায় আন্দোলনে আমরাই আবার নামব।’ উল্লেখ্য এদিন রামপুরহাটে আনারুল হোসেন কিন্তু দাবি করেছেন, বকটুইয়ের ঘটনায় বিরোধীরা জড়িত।