নিজস্ব প্রতিনিধি: ইতিহাসে আছে ভুরি ভুরি নিদর্শন। রাজার ছেলের সঙ্গে রাজার মেয়ের বিয়ে। সেই বৈবাহিক সম্পর্ক শুধু যে দুই রাজ্যের ভবিষ্যৎকেই সুরক্ষিত করতো তাই নয়, দুটি রাজ্যের জোটকেও শক্তিশালী করে তুলতো। স্বাধীন ভারতেও বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের বাড়ির ছেলেমেয়ের বিয়ে হতে দেখা গিয়েছে যেখানে দুটি পরিবার দুটি ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। তৃণমূল(TMC) সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) সেই ধারা থেকে বার হয়ে এসে পা রাখলেন নতুন বৈবাহিক সম্পর্কের গঠনের পথে। তিনি জোর দিলেন বাংলার(Bengal) অখন্ডতার ওপর। যে পাহাড়ের মানুষ বার বার বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার দাবি তুলছেন সেই পাহাড়ের মেয়েকেই এবার নিজের বাড়ির বউ করে ঘরে তুলতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই পন্থা রাজ্য রাজনীতিতে কার্যত মমতার মাস্টারস্ট্রোক হয়ে উঠতে চলেছে।
গত বছর মার্চ মাসের শেষে দার্জিলিং(Darjeeling) সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেবার প্রশাসনিক বৈঠকের পাশাপাশি দার্জিলিংয়ে জনসভাও ছিল। সেই মঞ্চে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের পরিবারের একজনকে বিয়ে দিচ্ছি। পাহাড়ের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে। ওকে বাড়ির বৌমা করে নিয়ে যাব। আপনাদের বাড়ি এখন আমারও বাড়ি।’ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের কার বিয়ে হচ্ছে তা নিয়ে তখন কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। কৌতূহল তৈরি হয়েছিল সেই ‘পাহাড়ের মেয়েকে’ নিয়েও। এতদিনে তা পরিষ্কার হল। জানা গিয়েছে, আগামী ৬ ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে আবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁরই সহপাঠীর সেই বিয়ে হতে চলেছে। আবেশ কেপিসি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়েছেন। সেই সময়ে তাঁর সঙ্গে কার্শিয়াংয়ের বাসিন্দা তথা সহপাঠী ওই তরুণীর আলাপ হয়। এবার তাঁকেই বাড়ির বউ করে আনছেন মুখ্যমন্ত্রী। এও জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী গত বছর একবার উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে আবেশের সেই সহপাঠীকে গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। তারপর তাঁর সঙ্গে কথাও বলেছেন। সম্ভবত এরপরই দার্জিলিংয়ের জনসভায় ওই কথা বলেন মমতা।
ডিসেম্বর মাসের গোড়ায় উত্তরবঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই আবেশের বিয়েতে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। ৫ ডিসেম্বর কলকাতায় চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন। তারপর ৬ তারিখ বিয়ে। চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনের পরই মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাবেন বলে খবর। তবে জানা গিয়েছে, আবেশের বিয়েতে বরযাত্রীর সংখ্যা থাকবে একেবারে হাতেগোনা। পরিবারের ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজন ছাড়া মন্ত্রীসান্ত্রী কমই থাকবেন। একমাত্র ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাস বরযাত্রী হিসাবে যেতে পারেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে বড় ধাক্কা খেয়ে বসে আছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ও তাদের মদতদাতা বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় পাহাড়ে এখন শান্তি ফিরেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদের সুর কার্যত ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। জোর কদমে চলছে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। এই অবস্থায় পাহাড়ের সঙ্গে কলকাতার(Kolkata) বৈবাহিক সম্পর্ক আগামী দিনে পাহাড়বাসীকে বাংলার মূল জনজীবনের যোগাযোগ আরও বাড়বে। বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সুরও কমে যাবে।