নিজস্ব প্রতিনিধি: কাগজেকলমে যা দেখানো হয়েছে, বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে তার বিস্তর ফারাক। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই কাগজেকলমে দেখানো পরিমাণের চেয়ে বাস্তবে জমি কম রয়েছে। সাধারণভাবে এই ফারাক ধরা বেশ মুশকিল। বিক্রি বা অন্য কোনও কারণে জমি মাপজোক করলে বিষয়টি ধরা পড়ে। এমনই ভুল তথ্যের প্রায় চার লক্ষ অভিযোগ হাতে এসেছে নবান্নের(Nabanna)। জমি সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডার বা রাজ্যের Land Records’র সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির বিস্তর ফারাকের এই সব ঘটনা এখন চোখে পড়ছে আধিকারিকদের। আর তার জেরেই ওই সব অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সেই নির্দেশ পেয়েই সেই সব অভিযোগের নিষ্পত্তিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতর(Land and Land Revenue Department)। ঠিক হয়েছে, এই ধরনের ভুল সংশোধনের জন্য আর জেলা সদরে দৌড়তে হবে না। মহকুমা স্তরে ভূমি ও ভূমিসংস্কার আধিকারিককেই ভুল সংশোধনের দায়িত্ব দিয়েছে নবান্ন।
আরও পড়ুন ‘কথায় কথায় কারও চাকরি খাবেন না’, হলফনামা দুপুর ১টার মধ্যে
সম্প্রতি জমি সংক্রান্ত তথ্য গরমিলের ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ২৫২টি অভিযোগের রিপোর্ট জমা পড়েছে নবান্নে। অনিচ্ছাকৃত ভুলের পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষেত্রে অসাধু চক্রের লোকজনও ল্যান্ড রেকর্ডসের তথ্য বদলানোর কাজে জড়িত থাকে। জমির মালিকপক্ষকে বাড়তি আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে এই অসাধু চক্র কারবার চালায়। রাজ্যের ভূমি ও ভূমিসংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ঋণ পেতে জমি সংক্রান্ত নথি জমা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। জমি বেশি হলে বাড়ে ঋণের অঙ্কও। আবার জমির পরিমাণ বেশি হলে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের টাকাও বেশি পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে মূলত নথির ওপর ভিত্তি করে ঋণ দেওয়া হয়। ফলে জমির পরিমাণ কম হলেও অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা পান মালিক। Mutation বা Land Records সংক্রান্ত কোনও কাজ করার সময়ও জেলায় নিযুক্ত Revenue Officer’রা ভুল তথ্য এন্ট্রি করছেন। এই কারণেই বাস্তবের সঙ্গে বিস্তর ফারাক তৈরি হচ্ছে।
আরও পড়ুন ১২ হাজার নিয়োগে আমরা কয়জন চাকরি পাব, প্রশ্ন আন্দোলনকারীদের
তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এখন নির্ভুল তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে প্রথমে BLRO-দের জায়গায় DLRO অর্থাৎ জেলার ভূমি ও ভূমিসংস্কার আধিকারিকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু প্রায় ৪ লক্ষ অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তির স্বার্থে মহকুমায় নিযুক্ত ভূমিসংস্কার আধিকারিককেই এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। Land Records-এ তথ্যে গরমিলের জেরে বিগত এক বছরে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছে নবান্ন। বিভাগীয় তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় এঁদের মধ্যে অনেকের পদোন্নতি আটকে গিয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে কয়েকজন আধিকারিকের পদও।