নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতার কাছেই থাকা উত্তর ২৪ পরগনা(North 24 Pargana) জেলার দত্তপুকুর থানার(Duttapukur PS) নীলগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মোষপোল পশ্চিমপাড়া অঞ্চল। ছুটির দিনে সাত সকালে সেখানেই ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ বিস্ফোরণ(Blast)। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। বেসরকারি ভাবে আগেই জানা গিয়েছিল মৃতের সংখ্যা ১০। যদিও পুলিশ প্রথমে তা মানতে চায়নি। তাঁদের দাবি ছিল মৃতের সংখ্যা ৬। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সংখ্যাও বাড়ছে। দুপুর দেড়টায় পাওয়া তথ্য বলছে উদ্ধার হয়েছে ৮জনের দেহ। আর একই সঙ্গে জানা গিয়েছে এদিনের এই বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ওপর খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসতের ঘটনায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘটনার দায় সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে মুখ্যসচিবকে(Chief Secretary)। কাউকে রেয়াত না করারই বার্তা দিয়েছেন তিনি।
এদিন সাতসকালে বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছে দত্তপুকুর এলাকা। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে বারাসত শহর থেকেও। বেআইনি বাজি কারখানার বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই প্রবল ছিল যে, ওই সময় কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের দেহাংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আশপাশে। যে বাড়িতে বাজি তৈরি হত, সেই বাড়িটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত। ভেঙে পড়েছে ছাদ। বাড়ির কংক্রিটের পিলারও ভেঙে পড়েছে। তার নীচে অনেকেই আটকে পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আশপাশেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ছিন্নভিন্ন দেহাংশ। কোথাও গাছের ডালে, আবার কোথাও টালির চাল থেকে মৃত ব্যক্তিদের দেহাংশ ঝুলতে দেখা গিয়েছে। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে রয়েছেন। কার্যত তাঁর উপস্থিতিতেই উদ্ধারকাজ চলছে। এর মধ্যেই গ্রামবাসীরা বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের দাবি, বাজি কারখানার আড়ালে বোমা তৈরির কাজ চলত এই জায়গায়। পুলিশকে জানালেও কোনও কাজ হয়নি। আর তার জেরেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
জানা গিয়েছে, যে বাড়িতে এদিন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তার মালিক নাজিবুল রহমান। ওই এলাকাতে তার আরও একটি বাড়ি আছে। এদিন ঘটনার পরে পরেই গ্রামবাসীরা নাজিবুলের সেই বাড়ি ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, একদিকে সামসুল আলি হোদার প্রশাসনিক যোগাযোগ এবং নাজিবুলের টাকা দিয়েই ওই এলাকায় একের পর এক বাড়িতে অবৈধ ভাবে বাজি কারখানা চলছিল। বাজি তৈরির আড়ালে বোমা তৈরি হতো সেখানে। এর আগেও এলাকায় কয়েকবার ছোটখাটো বিস্ফোরণও হয়েছে। কিন্তু, সব দেখেও পুলিশ-প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসেছিল। এমনকী যে বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে সেই নাজিবুলকেও এর আগে সতর্ক করেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা যাতে সেখানে বোমা বাঁধার কাজ আর না করা হয়। কিন্তু, তাতেও নাজিবুল কোনওরকম কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ। বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে কাজ করাতেন। মালদা ও মুর্শিদাবা থেকে লোক নিয়ে আসা হয়েছিল বাজি ও বোমা তৈরির জন্য। এদিন বিস্ফোরণের ঘটনার পরে পরেই নাজিবুলের বাড়িতে ঢুকে পড়ে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী বস্তা বস্তা বাজি বার করে আনেন। পাশাপাশি বস্তা ভর্তি বোমা উদ্ধারও হয়েছে। তাঁরা পুলিশকেও ওই বাড়িতে প্রথমে ঢুকতে দিতে চাননি। বাড়িতে পাওয়া বস্তা বস্তা বাজি ভিজিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেই জানা গিয়েছে।
যে বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছে শুধু সেখানেই না, আশপাশের অনেক বাড়িতেও বাজি এবং বাজি তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যাচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। স্থানীয়রা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে সে সব জলের পাইপ দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছেন, যাতে আবার আগুন না লাগে। তবে এদিনের ঘটনায় সব থেকে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করার সাহস বারাসত ও দত্তপুকুর থানার কী করে হল সেই প্রশ্নও উঠেছে। কার প্রশ্রয়ে বেআইনি ভাবে বাজি কারখানা চলছিল সেই কৈফিয়তের মুখে পড়েছেন বারাসত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ও স্থানীয় মহকুমা এবং জেলা শাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী।