নিজস্ব প্রতিনিধি: একের পর এক প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদি সরকার(Modi Government)। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁদের দাবি, রাজ্যে এই সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। এবার শুধু অভিযোগই নয়, কার্যত বাংলায়(Bengal) ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকারকে এবার ‘হুমকি চিঠি’ পাঠাল মোদি সরকার যা মুখ্যমন্ত্রীকে খুবই ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে মোদী সরকার। এ বার গ্রামীণ আবাস যোজনার(PMGAY) ক্ষেত্রেও মোদি সরকার একই রাস্তা নিল। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের নির্দেশ মাফিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না-করলে আবাস যোজনার টাকা ছাড়া হবে না। এই চিঠিকেই কার্যত ‘হুমকি চিঠি’ হিসেবেই দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী, অন্তত নবান্ন সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে। নবান্ন(Nabanna) সূত্রের খবর, গোটা ঘটনায় রীতিমত ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের পাঠানো ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দিল্লিকে পাল্টা চিঠি পাঠাতে চলেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।
আরও পড়ুন ‘রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পে কাজ পাবেন জবকার্ডধারীরা, সিদ্ধান্ত মমতার
নবান্নের আধিকারিকদের ব্যাখ্যা, কেন্দ্রের শর্ত মেনেই আবাস যোজনা প্রকল্প রূপায়ণ করছে রাজ্য সরকার। অনিয়ম রুখতে প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল নবান্ন। যে কারণে জেলাশাসক এবং বিডিও-দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও যখনই কোনও অনয়িমের অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসন তখন কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। তার পরেও কেন্দ্র টাকা দিতে টালবাহানা করছে। টাকা চেয়ে রাজ্যের তরফে একাধিক বার দিল্লিকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী। যদিও এই নিয়ে এতদিন কোনও উচ্চবাচ্যই করেনি কেন্দ্র। এতদিন পর এখন হঠাৎ নতুন করে কেন্দ্রের অভিযোগ তোলার কী মানে, সেটাই প্রশ্ন নবান্নের কর্তাদের। এটা অবশ্য প্রথম নয়। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল, আগের বছরের খরচের হিসেব না-দিলে নতুন বরাদ্দের অনুমোদন মিলবে না। নবান্ন সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে আবার কেন্দ্র কিছু নতুন শর্ত চাপিয়েছে।
আরও পড়ুন প্রাথমিক টেটে উত্তরপত্র রিভিউ এবং স্ক্রুটিনির সুযোগ, ঘোষণা পর্ষদের
মুখ্যসচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আবাস যোজনার অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে FIR করতে হবে এবং সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিতে হবে। BDO-সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদেরও শোকজ় করতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশ কতটা কার্যকর হলো, সেই বিষয়ে ১০ মার্চের মধ্যে দিল্লিকে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। অন্যথায় আবাস যোজনার টাকা দেবে না কেন্দ্র। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের আধিকারিকদের দাবি, কেন্দ্র যে সব অভিযোগ এনেছে সেগুলো তেমন গুরুতর নয়। যেমন, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাড়ির গায়ে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ লেখা দেখতে পেয়েছেন। কয়েকটি জায়গায় লোগো ঠিক মতো ব্যবহার করা হয়নি। কারও আবার ভুল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের সুবিধে পাওয়ার উপযুক্ত নন, এমন ব্যক্তিদেরও নাম রয়েছে তালিকায়। মোট সাতটি জেলায় ঘুরে এই ধরনের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। কেন্দ্রের সুপারিশ মেনে আবাস যোজনার উপভোক্তাদের তালিকা নতুন করে ঝাড়াই-বাছাই করা হয়েছে। এমন অনেকের নামই বাদ পড়েছে, যাঁদের সত্যিই এই প্রকল্পের সুবিধে পাওয়ার কথা। সে সব বিষয়ে তৎক্ষনাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার পরেও কেন্দ্র রোজ নিত্য-নতুন বাহানা খুঁজছে।
আরও পড়ুন খড়দহতে অটো চুরির অপরাধে গ্রেফতার অটো ইউনিয়নের সেক্রেটারি
এই বিষয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের দাবি, ‘টাকা না-দেওয়ার জন্য কেন্দ্র রোজ একটা করে ফ্যাকড়া তুলছে। এটা সঙ্কীর্ণ রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয়। অন্যান্য রাজ্যে গেলে এর চেয়ে বেশি অনিয়ম খুঁজে পাওয়া যাবে। এখানে অনেক স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ হয়। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প হোক কিংবা প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা, কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাংলা অনেক এগিয়ে। সেই জন্য কেন্দ্রীয় সরকারই একাধিক বার দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। এখন সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে কেন্দ্র বিভিন্ন অজুহাত খাড়া করে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা আটকে দিচ্ছে। এর ফলে সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষরা প্রাপ্য সুবিধে থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা খুবই দুর্ভাগ্যের।’
