নিজস্ব প্রতিনিধি: টেন্ডার(Tender) ডাকা নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ আগেই উঠেছিল মুখ্যমন্ত্রীর(Chief Minister Mamata Banerjee) কানে। সেই সঙ্গে পৌঁছেছিল জেলা শাসক(DM) ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কদর্য রাজনীতির অভিযোগও। বাঁকুড়ায়(Bankura) প্রশাসনিক সভা(Administrative Meeting) করতে এসে সেই সভা থেকেই এবার মুখ্যমন্ত্রী এই দুই ইস্যুতে কার্যত তোপ দাগলেন জেলার সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মুকে(Mritunjay Murmu)। সাফ জানালেন, ‘ডিএম, এসপিদের বিরুদ্ধে কূটকচালি করলে সব ভেঙে দেব।’ সাম্প্রতিক কালে মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে প্রকাশ্যে রাজ্যের অন্য কোনও জেলার জেলা সভাধিপতিদের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা যায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। অনেকেই মনে করছেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি পদে মৃত্যুঞ্জয় মুর্মুকে সম্ভবত দ্বিতীয় দফায় আর ফেরাবেন না তৃণমূলনেত্রী। সেক্ষেত্রে দায়িত্ব পেতে পারেন অন্য কেউ।
আদতে এদিন মুখ্যমন্ত্রী এমনিই এমনিই মৃত্যুঞ্জয়কে চেপে ধরেননি। ঘটনার সূত্রপাত বেশ কিছুদিন আগে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল জেলা সভাধিপতির বৈঠকের ভিডিও। সেখানে জেলাস্তরের আধিকারিকরা থাকলেও জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার ছিলেন না। সেই বৈঠকের যে ভিডিও ভাইরাল হয়, সেখানে শোনা যায় ডিএমের কাছে একাধিক ফাইল আটকে রয়েছে। তার জন্য নাকি কোনও উন্নয়নের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই ডিএম-এর বিরুদ্ধে লিফলেট ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। সেখানে কে রাধিকা আইয়ারের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তোলা হয়। সেই ঘটনার জল গড়িয়েছিল অনেকদূর। ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল খোদ জেলা শাসককেই। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই এদিন জেলা সভাধপতিকে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী টেন্ডার নিয়েও চেপে ধরেন মৃত্যুঞ্জয়কে।
প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মৃত্যুঞ্জয়কে প্রশ্ন করেন, ‘টাকা তো নিয়েছেন, কী করেছেন? সবচেয়ে বেশি টেন্ডার কোন দফতর থেকে হয়? টেন্ডার কীভাবে হচ্ছে? সরকারি কাজের টেন্ডার পরে রয়েছে কেন? সবাই বলছে টেন্ডারে স্বজনপোষণ চলছে। পূর্ত দফতর কী সব টেন্ডার সময়মতো করে নাকি তা ফেলে রাখে নিজের পছন্দের লোককে দেওয়ার জন্য? কখনও কখনও টেন্ডার সময়মতো করলাম না, ফেলে রাখলাম নিজের লোককে দেওয়ার জন্য, এসব চলবে না। স্পষ্ট করে দিলাম তোমায়। যে সমস্ত এজেন্সি দীর্ঘদিন ধরে কাজ ফেলে রেখেছে, ৪-৫ বছর পর বলছে জিনিসের দাম বাড়ায় অতিরিক্ত টাকা প্রয়োজন, তাদের ব্ল্যাকলিস্ট করে দাও। কোনও কাজ ফেলে রাখা যাবে না। আমার কাছে খবর আছে! তুমি দেখে নাও পূর্ত দফতরের কোন কোন টেন্ডার পড়ে রয়েছে। তুমি ৭ দিনের মধ্যে ওই রিপোর্ট দেবে। সেটা পাঠাবে মলয় ঘটকের কাছে। কী টেন্ডার হয়েছে, কী কাজ শুরু হয়নি তার একটা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করে সাত দিনের মধ্যে নবান্নে পাঠাবে।’
এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে কদর্য রাজনীতি নিয়ে মৃত্যুঞ্জয়কে কড়া বার্তা দেন। সাফ জানিয়ে দেন, ‘দুদিন অন্তর ডিএম এসপি বদল হবে না। এটা কেউ ভেবে থাকলে ভুল করবে। এই ডিএম এসপির সঙ্গেই কাজ করতে হবে। ডিএম, এসপিদের বিরুদ্ধে কূটকচালি করলে সব ভেঙে দেব। তুমি জেলা সভাপতি। তুমিই টিম চালাবে। অন্য কেউ চালাবে না। তুমি শিবাজির কথায় চলবে না। এর থেকে বেশি হাটে হাঁড়ি ভাঙলাম না।’