নিজস্ব প্রতিনিধি: রাক্ষসী গঙ্গা(Ganga) আর সর্বগ্রাসী পদ্মা(Padma)। এই দুই বোনকে নিয়েই বেঁচে থাকতে হয় বাংলার(Bengal) দুই জেলা মালদা(Malda) আর মুর্শিদাবাদকে(Murshidabad)। সেই দুই জেলাতেই এদিন পা রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তাঁর এই সফরের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিল দুই জেলার ভাঙন দুর্গত এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ, যদি তিনি এই সফরে এসে ভাঙন ঠেকানোর জন্য কিছু ঘোষণা করেন। সেই আশা মাঠে মারা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন দুই জেলার জন্য গঙ্গা-পদ্মা ভাঙন(Erosion) ঠেকাতে ৮০ কোটি টাকার কাজের শুভ সূচনা করার পাশপাশি আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন এই দুই নদীর পাড় বাঁধানোর জন্য। সব মিলিয়ে দুই জেলায় গঙ্গা-পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে ১৮০ কোটি টাকার কাজ শুরু হরে চলেছে।
গতবছর মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদ জেলায় এসে জঙ্গিপুর মহকুমার সামশেরগঞ্জের ভাঙন কবলিত এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। ভাঙন কবলিত এলাকা নিজে পায়ে হেঁটে দেখেন। সেই সময়েই তিনি ভাঙন রোধে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। সেই সময় তিনি এটাও জানিয়েছিলেন, প্রতিবছর ভাঙন রোধের জন্য তিনি পৃথক পৃথক অর্থ বরাদ্দ করবেন। সেই ঘোষণা মোতাবেক এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও ১০০ কোটির বরাদ্দ ঘোষণা করেন। গতবছর মুখ্যমন্ত্রী ভাঙনের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত ৮৬টি পরিবারের হাতে জমির পাট্টা তুলে দেন। সেই সঙ্গে তিনি জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ‘যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, তাঁদের পাট্টা দিয়ে দেবেন।’ তারপর গত এক বছরে ভাঙনে আরও কয়েকটি বাড়ি ও জমি গঙ্গায় চলে যায়। এদিন সেই সর্বহারাদের হাতে জমির পাট্টা তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি তাঁর নয়া নির্দেশ, ‘গঙ্গা ভাঙনে যাদের ঘর বাড়ি চলে গিয়েছে বা ভেঙে যেতে পারে তাঁদের দূরে সরে যেতে হবে। ভাঙন কবলিত এলাকার জন্য স্পেশ্যাল ব্যবস্থা নিয়ে দরকার হলে বাড়ি বানিয়ে দিতে হবে। জমি তো আমরা দেব, দরকার পড়লে বাড়িও বানিয়ে দিতে হবে। ভাঙন এলাকা থেকে ১০ কিমি দূরে সরকারি জমিতে বাড়ি বানিয়ে দিন। গঙ্গা ভাঙন এখানে বড় সমস্যা, কেন্দ্র সব টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার যেটুকু সাধ্য আমি সেটাই করবো।’
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে এদিন স্বাগত জানিয়েছেন ভাঙন দুর্গতরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ‘দিনের পর দিন আমরা অবহেলিত। গঙ্গা ভাঙনে আমাদের ভিটে, জমি সব হারিয়েছি। কেন্দ্রীয় সরকার উদাসীন। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। উনি যে পাশে আছেন সেটা আমরা জানি। এবার তিনি যে ভাঙন রোধের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কাজ করতে উদ্যোগী হয়েছেন তাতে আমরা খুশি। তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হোক, এটাই চাই। গঙ্গা আমাদের জমি বাড়ি সব গিলে খেয়েছে। আমরা চাই এবার নদীতে পোক্ত বাঁধের ব্যবস্থা করুন। তাহলে আর কারও জমি, বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে যাবে না। পদ্মা বিশাল নদী। সামান্য বাঁধে তো আটকে রাখা যাবে না। তাই অল্প অল্প করে যেটুকু কাজ হবে, যেন ভালো করে হয়।’ জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, গতবছর মুখ্যমন্ত্রী যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন তার মধ্যে ২০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। বাকি ৮০ কোটি টাকার কাজ এবার শুরু হবে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন যে নতুন করে ১০০ কোটি টাকার কথা ঘোষণা করেছেন সেটা বাজেটের পরে হাতে আসবে। ৮০ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছে। এবার কাজ শুরু হবে।’