কৌশিক দে সরকার: দেশের মধ্যে বাংলাই(Bengal) সম্ভবত একমাত্র রাজ্য যেখানে দেশের ৩টি সর্বভারতীয় দল কংগ্রেস(INC), সিপিআই(এম)(CPIM) ও বিজেপি(BJP) সব আসনেই লড়াই করতে চায়। একই সঙ্গে রাজ্যের সব আসনে লড়াই করতে চায় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও(TMC)। অর্থাৎ বাংলার মাটিতে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে থাকছে ৩টি প্রধান দল। তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস। এদিনই পাটনায় সম্পন্ন হয়েছে বিজেপি বিরোধী জোটের প্রথম বৈঠক। আগামী বৈঠক হবে জুলাই মাসের ১০ অথবা ১২ তারিখ হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলার বুকে। সেখানেই আসনবন্টন সূত্র নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাংলায় কোন ফর্মুলায় আসন ভাগ হবে ৩টি বিজেপি বিরোধী দলের মধ্যে? সেই ফর্মুলা তৃণমূল সহ কংগ্রেস ও বামেদের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব মেনে নিলেও প্রদেশ স্তরের বাম ও কংগ্রেসের নেতারা মানবেন তো?
আরও পড়ুন ৩৮ হাজারেরও বেশি বুথে এজেন্ট বসানো নিয়ে চাপে বিজেপি
উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছিল ২২টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন। কংগ্রেস পায় মাত্র ২টি আসন। খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল বামেদের। একুশের ভোটে আবার বাম আর কংগ্রেস বাংলার বিধানসভা থেকেই হারিয়ে গিয়েছে। বিজেপি বিরোধী একমাত্র দল যা বাংলার মাটিতে টিকে রয়েছে তার নাম তৃণমূল কংগ্রেস। সেই হিসাবে এখানে ২৪’র ভোটে ৪২টি আসনেই তৃণমূলের একার লড়াই করার কথা। অর্থাৎ ৪২টি আসনেই লড়াই হবে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে। এই সূত্রে কংগ্রেস ও বামদের জাতীয় স্তরের নেতারা শিলমোহর দিলেও হলফ করেই বলা যায় তাতে রাজী হবে না বাংলার বাম ও কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা নিজেদের মধ্যে জোট ঘোঁট করে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েও ভোটে লড়বে এবং বিজেপি বিরোধী ভোট কেটে বিজেপিকেই জেতাতে সাহায্য করবে। কেননা তাঁদের লড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) ও তাঁর দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই নয়। অন্ধ মমতা বিরোধিতার পথে হেঁটে তাঁরা বাংলায় বিজেপির সুরে সুর মিলিয়ে শুধু আক্রমণ শানবে তাই নয়, তলে তলে বিজেপির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই লড়াই করবে।
আরও পড়ুন ‘History Should Be Change From Bihar’, পাটনায় দাবি মমতার
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সর্বভারতীয় জোটের কথা মাথায় রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো রাজ্যে কংগ্রেসকে ২টি আসন ছেড়ে দিতে পারেন। কিন্তু সেই ২টি আসন যে দক্ষিণ মালদা ও বহরমপুরই হবে তার কোনও গ্যারেন্টি নেই। কেননা গত লোকসভার নির্বাচনে এই দুটি আসনেই কংগ্রেস জিতেছিল। সেই হিসাবে এবারও মমতা ২টি আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে বাকি ৪০টি আসনে তৃণমূলের প্রার্থী দাঁড় করাতে পারেন। কিন্তু এই ফর্মুলা প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা না মানলে কংগ্রেসের ঝুলি একুশের মতোই খালি থেকে যাবে। আবার উনিশ ও একুশের ভোটে ঝুলি আয়হার বামেরা লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেবে না সেটাও বাম নেতারা মানবেন না। সব মিলিয়ে বাংলার বুকে সার্বিক বিজেপি বিরোধী জোট না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বরঞ্চ দেখা যাবে এখানে বিজেপিকে জেতাতে প্রায় প্রতিটি আসনেই হয়তো প্রার্থী দেবে বামেরা ও কংগ্রেস। তবে তা৬দের দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব যদি সেক্ষেত্রে প্রতীক না দেয় তাহলে কংগ্রেস ও বাম ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন তা কিন্তু লাখ টাকার প্রশ্ন।
আরও পড়ুন শুভেন্দুকে ধাক্কা দিয়ে কেন্দ্র মেনে নিল বাহিনী অপর্যাপ্ত
তবে ২০১৬’র বিধানসভা নির্বাচন, ২০১৯’র লোকসভা নির্বাচন এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, বিজেপি জেতার মতো অবস্থায় গেলেই কংগ্রেস ও বামেদের ভোট চলে আসে তৃণমূলের ঝুলিতে। ২০১৬’র বিধানসভা নির্বাচনে বাম আর কংগ্রেস জোট গড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়েছিল। কিন্তু সেই জোট মানেননি কংগ্রেসের সমর্থকরাই। তাঁদের একটা বড় অংশই ভোট দিয়েছিল তৃণমূলকে। আবার ২০২১ সালের ভোটে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে ঠেকাতে বাম ও কংগ্রেসের একটা অংশের ভোট তৃণমূলেও ঢুকেছিল। সেই হিসাবে ২০২৪’র ভোটে যদি বাংলার বাইরেও বিজেপি বিরোধী সার্বিক জোট হয় তাহলে এরাজ্যে আসন বন্টন সূত্র মুখ থুবড়ে পড়লেও লাভ হতে পারে তৃণমূলেরই। তাতে হয়তো বিজেপিকে সব আসনে হারানো যাবে না। কিন্তু রাজ্যের বেশির ভাগ কেন্দ্রেই তৃণমূল জিতবে। আর বাম ও কংগ্রেসের মেকি বিজেপি বিরোধী নেতারা খালি হাতেই বাড়ি ফিরবেন।