নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর কংগ্রেসে। পরে আসেন তৃণমূলে। জীবনের সব বড় রাজনৈতিক সাফল্য, কদর, প্রাপ্তি সবই জোড়াফুলের শিবিরে থাকাকালীন। সেই দল ছেড়ে তিনি এখন পদ্ম শিবিরে। হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতাও। কিন্তু তাঁর লড়াইয়ের রকমসকম দেখে ক্ষোভ ক্রমশই চড়ছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। ক্ষুব্ধ সঙ্ঘও(RSS)। কেননা অনেকেই মনে করছেন তাঁর লড়াইটা আর রাজনৈতিক থাকছে না, বরঞ্চ তা অনেকটাই ব্যক্তিকেন্দ্রীয় হয়ে পড়ছে যা বিজেপির(BJP) আদর্শ নয়। এমনকি সঙ্ঘও যা মান্যতা দেয় না। তাঁর রাজনৈতিক কার্যকলাপ, আক্রমণ, বক্তব্য দেখে পদ্ম শিবিরের অনেকেরই মনে করছেন, দল বাংলায়(Bengal) গুরুত্ব হারাচ্ছে। পরিবর্তে গুরুত্ব পাচ্ছে ব্যক্তিকেন্দ্রীয় আন্দোলন যা আর যাই হোক বাংলার মাটিতে বিজেপিকে মাইলেজ দেবে না। না বাড়তি ভোট এনে দেবে পঞ্চায়েত ভোটে, না বাড়তি আসন এনে দেবে লোকসভার নির্বাচনে। তাই বঙ্গ বিজেপির একটা বড় অংশের নেতাকর্মীদের নিশানায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)।
আরও পড়ুন চাকরি তো গেল, এবার ১৭০০ পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে
সঙ্ঘ ঘণিষ্ঠ বিজেপি নেতাদের দাবি, শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে প্রতিটি সভায় গিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Abhishek Banerjee) আক্রমণ শানছেন তা দেখে মনে হচ্ছে তিনি সম্ভবত ভুলে গিয়েছেন যে তিনি বিরোধী দলনেতা। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি শুধুমাত্র ‘অভিষেক বিরোধী নেতা’। এতে দলের কোনও লাভ হচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে সবতাই একা শুভেন্দুর লড়াই। সেখানে দাগ কাটছেন না বঙ্গ বিজেপির অনান্য নেতারা। কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইতা সবাইকে মিলেই করতে হচ্ছে। দল কার্যত এখন বাংলার বুকে লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছে। কী করতে হবে, কার বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে, কোন বিষয়ে আন্দোলন হবে সেই সব বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছেন না দলের নীচুতলার কর্মীরা। তৃণমূল যখন ঘর গোচ্ছাছে তখন বিজেপির কর্মীদের দলের নেতাদের মুখ পানে তাকিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে, কখন মাঠে নামার অর্ডার তাঁরা দেন সেটা জানতে। দলকে সঠিক ভাবে পরিচালিতই করা হচ্ছে না। শুধু জায়গায় জায়গায় সভা হচ্ছে আর সেখানে ফুট্বেজ কুড়াচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। মিথ্যা মামলায় ফেঁসে জেলে যেতে হচ্ছে কিংবা হেনস্থা পোহাতে হচ্ছে দলের নীচুতলার কর্মীদের। তখন কিন্তু কাউকেই পাশে পাওয়া যাচ্ছে না। অন্তত এমনটাই দাবি, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ বঙ্গ বিজেপির নীচুতলার নেতাকর্মীদের।
আরও পড়ুন শুরু হল প্রাথমিকে নিয়োগের ইন্টারভিউ, খুশি চাকরিপ্রার্থীরা
শুভেন্দুর বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ চড়ছে সেটা বিলক্ষণ জানেন সুকান্ত মজুমদার ও দিলীপ ঘোষও। মাঝে মধ্যেই তাঁরা ইচ্ছাকৃত ভাবেই হোক বা মুখ ফস্কেই হোক, শুভেন্দুর বিরুদ্ধেই বিবৃতি দেন। কার্যত দলের সমান্তরাল ভাবে যেভাবে শুভেন্দু নিজের কর্মসূচি সাজাচ্ছেন তা না পসন্দ সঙ্ঘেরও। সব থেকে বড় কথা শুভেন্দু দলে আসায় বিজেপির বেনিফিট কী হয়েছে তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। শুভেন্দুর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে হওয়া পুরসভা নির্বাচনে জিততেই পারেনি বিজেপি। এমনকি কাঁথি শহরেও তৃণমূলের ঝড় বয়ে গিয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর শুভেন্দু কোথাও দলকে জেতাতে পারেননি। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও নয়, কোনও বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও নয়। পুরসভা নির্বাচনে তো দলকে গোহারান হারতে হয়েছে সব জায়গাতেই। তাহলে শিশির পুত্রের ক্যারিশ্মা কোথায় গেল? সেই কী নিভে গেল? শুধুই গরমা গরম আক্রমণেই সীমাবদ্ধ থাকবেন তিনি? তাতে দলের কী লাভ হচ্ছে? প্রশ্ন ঘুরছে বঙ্গ বিজেপিতে।