নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরের(Bay of Bengal) অতি গভীর নিম্নচাপ পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। নাম হয়েছে তার ‘অশনি’(Ashani) দিল্লির মৌসম ভবন জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর থেকেই ‘অশনি’ ঘণ্টায় ১৬ কিমি বেগে উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে এগিয়ে আসতে শুরু করে দিয়েছে। এখন তার অবস্থান পুরী(Puri) থেকে ১,০৩০ কিলোমিটার এবং বিশাখাপত্তনম(Vishakhapatnam) থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দূরে। আগামী মঙ্গলবার ভোরের দিকে তা ওড়িশা কিংবা অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলের খুব কাছে এসে পড়বে। তারপর হয় সে স্থলভাগে প্রবেশ করবে না হয় ডান দিকে বাঁক নিয়ে উত্তর-পূর্ব অভিমুখে গিয়ে তা বাংলার উপকূলের কাছে হাজির হবে। যদিও আবহাওয়াবিদদের অনুমান, বাঁক নেওয়ার পর থেকেই দ্রুত শক্তি হারাতে শুরু করবে এই ঘূর্ণিঝড়। তার জেরে বাংলার বুকে এখনই বড় কোনও বিপদ নেই। তবে হবে ভারী বৃষ্টি। আর তার জেরেই এবার দক্ষিণবঙ্গের কৃষকদের(Farmers) জন্য বিশেষ নির্দেশ জারি করল নবান্ন।
বাংলার উপকূলে ‘অশনি’র ল্যান্ডফলের কার্যত কোনও সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। তবুও রাজ্য সরকার কোনও রকমের ঝুঁকি নিতে চাইছে না। আর সেই কারনেই নবান্ন থেকে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ৬ দফা সেই নির্দেশ মূলত জারি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের কৃষকদের জন্য। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘অশনি’র জেরে গাঙ্গেয় বঙ্গের জেলাগুলিতে ১০ থেকে ১৩ মে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাই দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ধানচাষিরা যেন দ্রুত পাকা ধান কেটে গুদামজাত করে দেন। পাশাপাশি, সবজি, তেল তৈরি হয়, এমন ফসল এবং ডাল চাষের জমি থেকে জমা জল দ্রুত বের করার ব্যবস্থা তৈরি করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও আখ, পেঁপে, কলা জাতীয় যে সমস্ত ফলের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা নিয়েও বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে নবান্ন। রাজ্যের কৃষিদফতরের পক্ষ থেকে জেলার সব ব্লকে বোরো ধান দ্রুত বাড়িতে তোলার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত সতর্কবার্তার লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। সব্জির মাচা ও পানের বরজকে শক্ত করে বেঁধে রাখার এবং তৈলবীজ, ডালশস্য প্রভৃতি জমি থেকে জল নিকাশির ব্যবস্থা করে রাখার পরামর্শ দিয়েছে কৃষিদফতর। প্রয়োজনে মেশিনের সাহায্যেও ধান কাটার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
যদিও রাজ্য সরকারের এই নির্দেশ বা পরামর্শ যে খুব দ্রুত পালন করা যাবে না এমনতাই জানিয়েছেন একাধিক জেলার কৃষকেরা। হুগলি, হাওড়া, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় সবে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় কৃষকদের দাবি, এত দ্রুত সব জমির ধান জমি থেকে তোলা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বৃষ্টি হয়েছে। জমি ভিজে রয়েছে। ধান কাটতে বেগ পেতে হচ্ছে। এই বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষিদফতরের আধিকারিক আশিস বারুই জানিয়েছেন, ‘এবছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। অধিকাংশ জমির ধান পেকে গিয়েছে। এই অবস্থায় ভারী বৃষ্টি হলে চাষিরা সমস্যায় পড়বেন। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হওয়া বয়ে গেলে বড়সড় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। হাতে দু’ থেকে তিনদিন সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে চাষিরা নিশ্চয়ই দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করবেন। গতবছর অতিবৃষ্টিতে আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনেক জমির ধান ভেসে গিয়েছিল। এবার ধান ওঠার মুখে এরকম দুর্যোগ হলে আবার চাষিরা ধাক্কা খাবেন। যদিও অধিকাংশ চাষির বিমা করা রয়েছে। তাই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিছুটা হলেও চাষিরা রেহাই পাবেন। এক সময় চাষিদের বিমা থাকত না। তখন কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকত না।’
চাষিরা অবশ্য বলছেন, জমিতে বীজ রোপণ করার পর ঘরে ফসল তোলার স্বস্তি অন্যরকম। বিমা সংস্থা থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া গেলেও সেই স্বস্তি পাওয়া যায় না। গ্রীষ্মের ধান চাষ করতে কালঘাম ছোটাতে হয়। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে চাষিরা মাঠে কাজ করেন। এত কষ্টের পরে গোলায় ধান তুলতে না পারলে আফশোসের শেষ থাকবে না। এবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য আলু চাষিরাও ভোগান্তির মধ্যে পড়েছিলেন। দু’বার তাদের আলুবীজ লাগাতে হয়েছিল। ধান চাষিরা আশায় ছিলেন। এতদিন সেভাবে ভারী বৃষ্টি হয়নি। শিস ধানের ভারে নুইয়ে পড়েছে। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে ‘অশনি’ সংকেতে চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে।