নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘আপকে বার ২০০ পার’, শ্লোগান তুলে বাংলা দখলে আসা গেরুয়া শিবির মুখ থুবড়ে পড়ে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে। তারপর কেন সেই নির্বাচনে হার হল সেই কারণ খতিয়ে দেখতে বসে গেরুয়া শিবিরের নেতারা দেখেন, বঙ্গ বিজেপির নেতারা বাস্তব অবস্থার ছবি বিকৃত করে পেশ করেছিল দলেরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। তাঁদের রিপোর্টে ছিল ভেজালে ভর্তি। আর সেই রিপোর্টকেই বেদ বাক্য মনে করে বাংলা দখলের জন্য ঝাঁপ দিয়েছিলেন মোদি-শাহ-নাড্ডারা। এখন অবশ্য তাঁরা বেশ সাবধানী। বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) নেতাদের মুখের কথা তাঁরা আর বিশ্বাস করেন না। কথায় কথায় তাঁদের কাজ করে দেখাতে বলেন। সেই সূত্রেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছে বাংলায় দলের সংগঠনের করুণ হালের ছবি। এদিকে সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন(Panchayat Election)। এই অবস্থায় দিল্লিতে জরুরি ভিত্তিতে নাড্ডা(J P Nadda) ডেকে পাঠালেন বঙ্গ বিজেপির বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে(Sukanta Majumdar), প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে(Dilip Ghosh) এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে(Suvendu Adhikari)।
আরও পড়ুন মমতাই ঠিক, কেন্দ্র ভুল, ঘুরপথে বোঝাল আরবিআই
বঙ্গ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সঙ্ঘের কাছ থেকে একটি রিপোর্ট গিয়ে পৌঁছেছে নাড্ডার কাছে। সেই রিপোর্টে ছত্রে ছত্রে বাংলার বুকে বিজেপির সংগঠনের বেহাল দশার কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রায় একই রকমের রিপোর্ট জমা পড়েছে বাংলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের দুই নেতা নেতা মঙ্গল পাণ্ডে এবং সুনীল বনতলের তরফ থেকে নাড্ডার কাছে। সেই রিপোর্টেও সঙ্ঘের দেওয়া রিপোর্টের সঙ্গে মিল রয়েছে। আর তা দেখেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন নাড্ডা। তার জেরেই জরুরি ভিত্তিতে বাংলার ৩ শীর্ষ নেতাকে তলব করেছেন নাড্ডা। আগামী ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে এই ৩জনকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠকে বসবেন নাড্ডা। সেখানে থাকতে পারেন অমিত শাহও। নাড্ডা ক্ষুব্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ দুটি রিপোর্টেই উল্লেখ করা হয়েছে, রাজ্য বিজেপির নেতারা এতদিন ধরে যে দাবি করে আসছিল নীচুতলার সংগঠন একেবারে মজবুত সেটা যে চূড়ান্ত মিথ্যে তা উল্লেখ করা হয়েছে ওই দুটি রিপোর্টেই। বাংলায় জেলায় জেলায় বুথ স্তরে দলের যে কোনও প্রভাবই নেই সেটাই উঠে এসেছে ওই দুই রিপোর্টে। তার জেরেই ৩জনকে জরুরি ভিত্তিতে তলব দিল্লিতে।
আরও পড়ুন ডিসেম্বরে কলকাতায় আসছেন ৪০ জন ইডি ও ২০ জন সিবিআই অফিসার
নাড্ডার কাছে যে ২টি রিপোর্ট জমা পড়েছে তাতে কার্যত বাংলার বুকে বিজেপি বর্তমান বেহাল দশা তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আলিপুরদুয়ার ও পুরুলিয়া জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন স্বচ্ছ ভাবে হলে সেখানে দলের ফল ভাল হবে। কিন্তু যে ভাবে দল ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে তাতে করে এই দুই জেলাকে ঘিরেও বেশি আশা না করাই ভাল। বুথে বুথে দলের কার্যালয় খুলে বসারও লোক নেই এখন। উল্টে দলের রাজ্য নেতারা মুখে যেভাবে বড় বড় কথা আউড়ে সভা করে চলেছেন তাতে দলের বেহাল দশা আরও বেআব্রু হয়ে পড়ছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সংগঠন ভাল করে তৈরি না করলে ভোটের পরে দলের প্রতীকে জেতা প্রার্থীরাও দল ছেড়ে চলে যেতে পারে। বাংলায় বিজেপির নীচুতলার সংগঠন একেবারে তলানিতে। এভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে ঠেকানো সম্ভব নয়।