27ºc, Haze
Wednesday, 29th March, 2023 12:03 am
নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি সাংসদ। তারওপর কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেই কিনা দায়ের হয়েছিল সোনার দোকানে চুরির অভিযোগ। সেই অভিযোগের জেরেই তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয় এবং সেই মামলার জন্যই বিচারপতি গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করেন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সেই গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি হতেই রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজে আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করায় রাজ্য রাজনীতিতে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। তার জেরে কিছুটা হলেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কেন্দ্রের শাসক দলের শিবিরেও। নজরে কোচবিহারের বিজেপি(BJP) সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক(Nishith Pramanik)। এদিন তিনি আলিপুরদুয়ারের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (থার্ড কোর্ট) এজলাসে উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
আরও পড়ুন খুদে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার খাতিরে নয়া অ্যাপ আনছে মমতার সরকার
প্রায় ১৪ বছর আগে আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন দু’টি সোনার দোকানে চুরির(Theft) ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল নিশীথের। তা নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয় আলিপুরদুয়ার থানায়। নিশীথের বিরুদ্ধে গত বছর ১১ নভেম্বর পরোয়ানা নির্দেশিকা জারি করেছিল আলিপুরদুয়ারের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (থার্ড কোর্ট)(Alipurduyar District Court)। যদিও, পরে সেই পরোয়ানার ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ২০১৯ সালে সাংসদ হওয়ার পর ওই মামলাটি বারাসাতের এমপি আদালতে স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে নিশীথের আবেদনের ভিত্তিতে ওই মামলাটি আবার আলিপুরদুয়ার আদালতের লোয়ার কোর্টে পাঠানোর নির্দেশ জারি করে কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court)। সেই সূত্রেই এদিন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে আলিপুরদুয়ারের আদালত চত্বরে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেন নিশীথ। এদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন বেশ কয়েক জন সমর্থকও। পাশাপাশি, আদালত চত্বর মুড়ে ফেলা হয়েছিল নিরাপত্তার চাদরে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে নিশীথ হঠাৎ আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
আরও পড়ুন মোদি-মমতার হাত ধরে চালুর পথে শিলিগুড়ি-ঢাকা বাস পরিষেবা
বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে এই ঘটনার নেপথ্যে কাজ করছে উত্তরবঙ্গের বুকে বিজেপির ক্রমশ জনসমর্থন কমার নানান ঘটনা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের ৫৪টি আসনের মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৩০টি আসন। কিন্তু সেই নির্বাচনের পরবর্তীকালে দেখা যাচ্ছে উত্তরবঙ্গের কোনও জেলাতেই আর সেভাবে বিজেপি প্রতি কোনও সমর্থন অবশিষ্ট নেই। এমনকি পৃথক গোর্খাল্যান্ড, পৃথক কামতাপুর, বা পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য গঠনের হিড়িক তুলেও নিজেদের পালে আর হাওয়া টানতে পারছে না গেরুয়া শিবির। যার সব থেকে বড় প্রমাণ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া শিলিগুড়ি পুরনিগমের নির্বাচন, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচন, পাহাড়ের জিটিএ নির্বাচন এবং দার্জিলিং পুরসভা সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক পুরসভার নির্বাচজনে কোনও দাগই কাটতে পারেনি পদ্মশিবির। ক্ষমতা দখল তো সেখানে বহু দূরের কথা। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে উত্তরবঙ্গেরই নির্বাচিত বিজেপি বিধায়কের একটা অংশ এখন পা বাড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূলের দিকে। সেই সঙ্গে বিজেপির জনসভায় লোকসমাগম কার্যত হচ্ছে না বললেই চলে। এই অবস্থায় নিশীথ এই মামলা উচ্চ আদালতে টেনে নিয়ে গিয়ে বিষয়টি জিইয়ে রাখলে পরবর্তীকালে তিনি নিজেই অসুবিধায় পড়তে পারতেন। কার্যত সেই সমস্যার সন্মুখিন না হওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের রাস্তা খোলা রাখতেই নাকি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আদালতে আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অন্তৎ সূত্রে তেমনতাই জানা গিয়েছে।