নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যের ৪টি স্বাস্থ্য জেলা সহ রাজ্যের ২৭টি জেলায় অবস্থিত বিভিন্ন স্তরের হাসপাতালে কর্মরত স্টাফ নার্স এবং হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্টদের বদলি করার নির্দেশ জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রতিটি জেলা থেকে গড়ে পঞ্চাশ জন নার্সকে মেডিক্যাল কলেজ, জেলা, মহকুমা, স্টেট জেনারেল, গ্রামীণ হাসপাতাল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সরিয়ে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বদলি করা হয়েছে। আর তা নিয়েই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য মহলে। কেননা একে তো এই নির্দেশ কার্যকর করার জন্য মাত্র ৭দিন ধার্য করা হয়েছে তেমনি যারা বদলি হলেন তাঁদের পরিবর্তে কারা শূন্যস্থান পূরণ করবে তা এখন জানা যায়নি। আর এখানেই স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা ঘিরে মাথায় হাত পড়েছে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের দাবি, জরুরি পরিষেবা যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য শূন্যস্থানে পুনর্নিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বদলির বিকল্প হিসাবে অতিরিক্ত নার্স ইতিমধ্যে নিয়োগ করা হয়েছে। আরও ৬০০০ হাজার নার্স নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
জানা গিয়েছে, যে ১২৫৬ জন স্টাফ নার্স ও হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্টকে বদলি করা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই গ্রেড ২ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতে কর্মরত ছিলেন। কলকাতা, জেলার মেডিকেল কলেজ, জেলা হাসপাতাল, গ্রামীণ হাসপাতাল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তাঁরা কর্মরত ছিলেন। আচমকাই এই বদলির নির্দেশে বলা হয়েছে সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁদের কাজ করতে হবে। তাঁরা ন্যাশনাল ইস্টস্টিউট অফ হেলথের কোর্স করেই বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করছিলেন। কিন্তু সমস্যা সেখানে নয়। কারণ তাঁরা প্রত্যেকেই সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে রাজি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, যদি কোনও রিলিভার না আসে, তাহলে ব্যাহত হবে চিকিৎসা পরিষেবা। কারণ অর্ডারে স্পষ্ট বলা হয়েছে, কোনও রিলিভার ছাড়াই সাত দিনের মধ্যে তাঁদের ছেড়ে দিতে হবে। রিলিভার অর্থাৎ, তাঁদের জায়গায় যারা কাজ করবেন। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। তাঁদের প্রশ্ন, রিলিভার ছাড়া নার্সরা বদলি হলে পরিষেবার কী হবে! সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বদলির সময়ে রিপ্লেসমেন্ট অর্ডারও থাকে। অর্থাৎ যাঁরা বদলি হচ্ছেন, তাঁদের জায়গায় কারা আসছেন, সেটাও উল্লেখ থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা হয়নি। সমস্যা সেখানেই।
জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের বক্তব্য, সাত দিনের মধ্যে নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বদলি হওয়া নার্সদের বদলে অন্য কাউকে সে জায়গায় আনা হয়নি। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা বলছেন, বিকল্প স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া একযোগে এত নার্স বদলি হলে হাসপাতালের পরিষেবার কী হবে? যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ৬ হাজার নার্স নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁদেরকেই শূন্যস্থান পূরণে নিয়ে আসা হবে। তাই অসুবিধা কিছু হওয়ার কথা নয়। যদিও জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, এই বদলির জেরে ব্যাহত হতে পারে টিকাকরণ কর্মসূচি ও জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত একাধিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি। হাসপাতালেরও নানা পরিষেবা ব্যাহত হবে বলেই আশঙ্কা করছেন জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।