নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার(Pradhanmantri Awas Yojna) জন্য কেন্দ্র সরকার বাংলার(Bengal) জন্য ৮ হাজার ২০০ কোটি বরাদ্দ করেছে। ওই টাকায় ১১ লক্ষ বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি ১৫ দফা শর্তও জুড়ে দিয়েছে মোদি সরকার(Modi Government)। শুধু তাই নয়, চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই সেই ১১ লক্ষ উপভোক্তাকে চিহ্নিত করার লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র। ডিসেম্বরের মধ্যে এই ১১ লক্ষ উপভোক্তা চিহ্নিত না হলে যে কেন্দ্র সরকার টাকা ফিরিয়ে নেবে সেই কথা গত সপ্তাহেই চিঠি দিয়ে নবান্নকে জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব। সেই কারণেই রাজ্য সরকারও(West Bengal State Government) এই উপভোক্তা তালিকা তৈরিতে যাতে বিন্দুমাত্র দুর্নীতির অভিযোগ না ওঠে তার জন্য রীতিমত এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সমীক্ষা করানো হচ্ছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে আশাকর্মীদের দিয়ে। কিন্তু সেই সমীক্ষায় জড়িত এক আশাকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গোটা বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল।
আরও পড়ুন শুভেন্দুর জনস্বার্থ মামলা নিয়ে প্রশ্ন বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই
উত্তর ২৪ পরগনা(North 24 Pargana) জেলার বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর(Swarupnagar) ব্লকের শাঁড়াপুল ডাকবাংলো গ্রাম পঞ্চায়েতের বিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা রেবা বিশ্বাস(৩৯) বছর দুই হল আশাকর্মী হিসাবে কাজ করছিলেন। তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন অন্তত ২০ বছর আগে। তারপর থেকেই তিনি বাপের বাড়িতে থাকতেন। আবাস যোজনার সমীক্ষার কাজে রাজ্য সরকার অঙ্গণওয়াড়ি কর্মী ও আশাকর্মীদের কাজে লাগাচ্ছে। সেই সূত্রে রেবাকেও কাজে বার হতে হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ করতে গিয়েই রেবাকে হুমকি ধমকির মুখে পড়তে হয়। অভিযোগ উঠেছে, সমীক্ষা করার সময়ে তাঁর ওপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল যে পাকা বাড়িকে কাঁচা বাড়ি হিসেবে দেখাতে হবে। তাতে তিনি রাজি না হওয়ায় তাঁকে গাড়ির সামনে ফেলে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়। অন্যদিকে, বিডিও অফিস থেকেও বলা হয়েছিল কোনওরকম অনিয়ম যেন না হয়। এই দুইয়ের মধ্যে পড়ে মানসিক চাপে ছিলেন রেবা। শেষে সোমবার সকালে তাঁর বাড়ির পিছনের বাগান থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
আরও পড়ুন সংগঠন বেহাল, মুখে শুধুই বড় বড় কথা, ক্ষুব্ধ নাড্ডা
রেবার পরিজনদের অভিযোগ, আবাস যোজনার সমীক্ষার কাজে গিয়ে রেবাকে প্রচণ্ড লাঞ্ছনার মুখে পড়তে হয়। তাঁকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করা হয়। সে দিন অপমানিত হয়ে বাড়ি ফিরে বোন অঞ্জলি এবং দাদা গোপালকে সব কিছু বলেছিলেন। প্রচণ্ড মানসিক চাপে ছিলেন রেবা। এদিন রেবার কাকা অরুণ বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘ গতকাল বাজারে যাচ্ছিলাম। আমাকে ও ডাকল। বলল, কাকা আমি সুইসাইড করব নয়তো চাকরি ছেড়ে দেব। গ্রামে সার্ভে করতে যাচ্ছি, যার দোতলা বাড়ি সে বলছে মাটির বাড়ি লিখে দাও। আমি তো এসব করতে পারব না। এরপর যখন ফের এনকোয়ারি হবে তখন তো আমার ওপরে চাপ হবে। আমি এই চাপ নিতে পারছি না। আমি ওকে বললাম, সুইসাইড করার কোনও প্রশ্নই নেই। তুই থানায় বল। নয়তো চাকরি ছেড়ে দে। ওর দাবি ওকে টানা হুমকি দেওয়া হতো। বলা হতো, ঘর না পেলে দেখে নেব। এই চাপ ও নিতে পারছিল না।’ এদিন রেবার দেহ উদ্ধারের পরে সরব হচ্ছেন এলাকার আশাকর্মীরাও। তাঁদের দাবি, হুমকির বিষয়টি শুধু যে রেবাকে পোহাতে হয়েছে তা নয়। এলাকার বহু আইসিডিএস কর্মী ও আশাকর্মীদেরও পোহাতে হচ্ছে। তা৬রা বিষয়টি বিডিও অফিসে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। তাঁদের দাবি, ‘আমাদের কাছে যদি এই পঞ্চায়েতের একশো জনের নামের তালিকা থাকে তাহলে ওদের সবাইয়ের কাঁচা বাড়ি বলে লেখার চাপ দেওয়া হচ্ছে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কাঁচা বাড়ি না লিখলে গাড়ির তলায় ফেলে মেরে দেব। কাজের কটা দিন আমাদের সিভিক পুলিশ দেওয়া হয়ছে। এরপর কাজ ফুরলো কি আমাদের সঙ্গে সিভিক যাবে?’ এই প্রশ্নই এখন আবাস যোজনার কাজে সমীক্ষা নিয়ে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল নবান্নকে। বিজেপি অবশ্য এদিনের ঘটনাকে আঁকড়ে ধরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়।