নিজস্ব প্রতিনিধি: ফরাক্কা বাঁধ নির্মাণের পর থেকেই বাংলার দুই জেলায় গঙ্গার(Ganga) ভাঙন আর তার জেরে হাজার হাজার মানুষের নিঃস্ব হয়ে যাওয়া এখন নিত্য বছরের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফরাক্কা বাঁধ যেহেতু কেন্দ্র সরকারের অধীনে তাই এই বাঁধের জন্য শুরু হওয়া ভাঙন মোকাবিলা করার কথা কেন্দ্র সরকারেরই। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরেই দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রের সরকার কার্যত এই বিষয়ে হাত গুটিয়ে রয়েছে। মিলছে শুধু গুচ্ছের প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। যাও বা কিছু কেন্দ্রের বরাদ্দ মিলছে সেটাও চোদ্দ ভূতে লুটেপুটে খাচ্ছে। আর তার জেরে মালদা(Malda) ও মুর্শিদাবাদ জেলায় সর্বস্বান্ত হচ্ছেন লাখো লাখো মানুষ। শনিবার থেকে মালদা জেলার সদর মহকুমার মানিকচক(Manikchawk) ব্লকের ভূতনির চর(Bhutnir Char) এলাকায় শুরু হয়েছে গঙ্গার ভাঙন। আর তার জেরে এবার সরব হলেন সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র(Sabitri Mitra)।
জানা গিয়েছে, শনিবার বিকাল থেকে ভূতনির চরে কেশোরপুর কালুটনটোলা এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। তলিয়ে গিয়েছে নদী তীরবর্তী কৃষি জমি, বড় বড় গাছ। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এখনই এই ভাঙন ঠেকানো না গেলে বিস্তীর্ণ এলাকা গঙ্গাগর্ভে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা। ভাঙন রুখতে কী পদক্ষেপ, তা নিয়ে প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি। এই অবস্থায় জেলা প্রশাসনের তরফে বালির বস্তা ফেলা হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। রবিবার এই ভাঙনের খবর পেয়ে এলাকার পরিদর্শনে যান রাজ্যের সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। সেখানে তাঁকে রীতিমত বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ভাঙন ক্রমেই এগিয়ে আসছে জনপদের দিকে। পাড়ে বড় বড় ফাটল। ধসে যাচ্ছে পাড়ের মাটি। বিপন্ন বহু পরিবার। সাবিনার এলাকা পরিদর্শনের পরে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ভাঙন ঠেকানোর পালা। কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ‘ভাঙন ঠেকাতে শুধু বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। এই বালির বস্তা দিয়ে কিছু হবে না। স্থায়ী বাঁধ তৈরি করতে হবে। প্রতি বছর বন্যার সময় এভাবে কোটি কোটি তাকার কাজ হয়, কিন্তু লাভ কিছু হয় না। এইরকম চলতে থাকলে ভূতনি এলাকা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আমরা চাই স্থায়ী বাঁধ তৈরি হোক। প্রতিবছর মাত্র দু চারজন ঠিকাদার ঘুরে ফিরে কাজ পায় ভাঙন রোধের। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। সব টাকা লুঠ হয়।’
এদিন মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র এই ভাঙন নিয়ে সরব হয়েছেন। তিনি এই অবস্থার জন্য কেন্দ্রের সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁর দাবি, ‘গঙ্গার ভাঙন জাতীয় সমস্যা। কেন্দ্রকে এব্যাপারে বহুবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও স্থায়ী পদক্ষেপ করেনি। ফলে প্রতি বছরই এখানকার বাসিন্দারা নদী ভাঙনের কবলে পড়েন। এব্যাপারে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছি বার বার। কিন্তু কেন্দ্র কিছুই করে না। যা কিছু করতে হয় রাজ্য সরকারকেই। এই ভাঙন ঠেকানোর স্থায়ী সমাধানের পথে না হাঁটলে একদিন গোটা মানিকচক ব্লক গঙ্গার ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। নদী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু মানুষকে সেখানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে পরিস্থিতি বুঝে আরও মানুষকে সরানো হবে।’ অন্যদিকে সাবিনা ইয়াসমিন(Sabina Yasmin) আশ্বাস দিয়েছেন বর্ষার পরে ওই এলাকায় যাতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা যায় সেটা তিনি দেখবেন।