নিজস্ব প্রতিনিধি: বর্ষা বিদায় নিয়েছে বাংলা(Bengal) থেকে। কিন্তু সেই বর্ষা বিদায়ের লগ্নেই রাক্ষসী গঙ্গা গিলে খাচ্ছে ভিটেমাটি থেকে মন্দিরও। সর্বহারা মানুষের হাহাকারে ভরে যাচ্ছে আকাশ বাতাস। কার্যত নিত্যদিন হাজার হাজার মানুষ চোখের সামনে দেখছেন তাঁদের ভিটেমাটি তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা। কিন্তু কিছুই করে উঠতে পারছেন না তাঁরা। প্রশাসন যে কিছু করছে না এমন নয়, কিন্তু তাঁদের প্রয়াস বালির বাঁধের সমান হয়ে দাঁড়াচ্ছে যা রাক্ষুসী গঙ্গা মুহুর্তের মধ্যে গিলে খেয়ে নিচ্ছে। আর গঙ্গার এই ভাঙন(Erosion) ঠেকাতে যে ধরনের সুবৃহৎ অর্থনৈতিক প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত ছিল সেই পথে হাঁটা দেয়নি মোদি সরকার। কার্যত বাংলার দুটি জেলা মালদা(Malda) ও মুর্শিদাবাদ(Murshidabad) জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ গত ৫ দশকে গঙ্গার ভাঙনে চূড়ান্ত ভাবে বিপন্ন হয়ে, সর্বস্ব হারিয়ে বার বার কেন্দ্রের সহায়তার দাবি তুলেছেন। রাজ্য সরকারও বার বার দাবি তুলেছে কেন্দ্র যেন এই ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই পথে কখনই হাঁটা দেয়নি কেন্দ্র সরকার।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের গোড়া থেকেই মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়ে গিয়েছে। মালদা জেলার ইংরেজবাজার সদর মহকুমার মানিকচক, কালিয়াচক-২ ও কালিয়াচক-৩ ব্লকে এবং মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কা ও সামসেরগঞ্জের বুকে এই ভাঙন চলছে। তবে প্রকোপ এবার বেশি কালিয়াচক-৩ ও সামসেরগঞ্জ এই দুটি ব্লকে। পুজোর পরে কালিয়াচকে(Kaliyachawk) ভাঙন কিছুটা কমলেও সামসেরগঞ্জে(Samserganj) পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ আকার হিসাবেই রয়ে গিয়েছে। সামসেরগঞ্জের বোগদাদনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতাপগঞ্জ ও মহেশটোলা এলাকাতেই এখন তাণ্ডব চালাচ্চছে গঙ্গা। প্রতিদিন সেখানে গঙ্গা গিলে খাচ্ছে আমবাগান, বাঁশবাগান, ধানের জমি, ৭ পুরুষের ভিটেমাটি, পাকা বাড়ি, স্কুলবাড়ি মায় মন্দির-মসজিদও। মহেশটোলার বাসিন্দাদের দাবি, গত শনিবার থেকে সেখানে গঙ্গার জল হু হু করে বেড়ে চলেছে। নদীর বুকে এখন কোথাও গভীরতা ১২০ ফুট তো কোঠাও ১৫০ ফুট। ইতিমধ্যেই সেখানে ১২টি পাকা বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। রবিবার রাতে এলাকার এক্মাত্র কালিমন্দিরটিও গিলে খেয়েছে গঙ্গা। বহু চেষ্টা করেও ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা যায় নি সেই মন্দির। এখন সেখানে আরও ৫০টি পাকা বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ঝুলে রয়েছে। সেইসব বাড়ির মালিকরা শেষ সম্বল যতটুকু পারেন সরিয়ে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছেন।
ভাঙনের হাত থেকে বা বাড়ির সামগ্রী রক্ষা করতে কয়েকশো পরিবার ইতিমধ্যেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এদের কেউ বিড়ি বাঁধেন, আবার কেউ নদীতে মাছ ধরে সংসার চালান। দিন আনি দিন খাই এই মানুষগুলো সারাটা জীবন ধরে তিলতিল করে জমানো টাকায় ঘরবাড়ি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু রাক্ষসী গঙ্গা গিলে খেয়েছে তাঁদের স্বপ্ন, সম্বলকে। সব হারিয়ে নিঃস্ব মানুষগুলি এখন খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে এই মানুষগুলির সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে বালির বাস্তাও ফেলা হচ্ছে। কিন্তু রাক্ষসী গঙ্গার কাছে সেসব নুড়ি পাথরের সমতুল্য। মুহুর্তের মধ্যেই তা চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে।