নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম হল মল্লভূম হিসাবে পরিচিত বাংলার বাঁকুড়া(Bankura) জেলা। সেই জেলারই মহিলাদের এবার আরও স্বাবলম্বী করে তুলতে রাজ্য সরকার(West Bengal Government) ৮৬৫ কোটি টাকা ঋণ(Loan) প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই ঋণ একক ভাবে দেওয়া হবে না। দেওয়া হবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর(Women Self Help Group) মাধ্যমে। বাঁকুড়া জেলার ৩১ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে এই ঋণ প্রদান করার কথা প্রাথমিক ভাবে অনুমোদন পেয়েছে। এর পাশাপাশি ওই জেলায় এই বছরের মধ্যেই আরও নতুন ৭ হাজার মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনের লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দিয়েছে রাজ্য সরকার। চলতি অর্থবর্ষেই(Current Financial Year) বাঁকুড়া জেলার ৩১ হাজার মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে(Bank Account) ৮৬৫ কোটি টাকার ঋণ পৌঁছে যাবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
বাংলার বুকে বর্তমানে নূন্যতম ১০জন মহিলাকে নিয়ে এক একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন করা হয়। এখন সেখানে ৩১ হাজার ৫৬২টি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে সেখানে আরও ৭ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। তবে বর্তমানে যে ৩১ হাজার ৫৬২টি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে মল্লভূম বাঁকুড়া জেলায় তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলতি অর্থবর্ষে মোট ৮৬৬ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা ঋণ দেবে রাজ্য সরকার। জেলার ১৫০টি গ্রামীণ ও রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্কের শাখা জেলাজুড়ে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দেওয়ার কাজ করে আসছে। এবারেও তাঁদের মাধ্যমেই ঋণ দেওয়ার কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যেই চলতি অর্থবর্ষে ১৫ হাজার ৫০৯টি গোষ্ঠীকে ৩৩০ কোটি ৩০ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বাকি টাকাও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গোষ্ঠীগুলি পেয়ে যাবে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন গোষ্ঠী তৈরির কাজ আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কেননা এই নতুন গোষ্ঠী গঠনের কাজ ওই জেলায় প্রায় ৬৫ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনের।
জেলা প্রশাসনের তরফে এটাও জানা গিয়েছে যে, নতুন গোষ্ঠী তৈরির প্রথম বছরে তাঁদের দেড় লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। পরের বছরগুলি তা বেড়ে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। প্রতি বছরে সেই ঋণ ব্যাঙ্ককে শোধও করতে হবে গোষ্ঠীর সদস্যদের। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি, দেশের মধ্যে পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়া। এখানে তাই গ্রামীণ এলাকায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা হাঁস, মুরগি, গোরু, ছাগল প্রভৃতি প্রতিপালন করে থাকেন। সেখান থেকে তাঁদের আয়ও হয়। তাই বাড়িতে প্রাণী পালনে উৎসাহ দিতে গোষ্ঠীর মাধ্যমে পাওয়া ঋণ প্রত্যেকেরই কাজে লাগে। এছাড়াও জেলার অনান্য মহিলারাও ঋণের সুবিধা পান। তাঁরা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে হস্তশিল্পের নানা সামগ্রী বাজার থেকে কিনতে পারেন। এরফলে গোষ্ঠীর ঋণ বাজারের মধ্যেই ঘোরাফেরা হয়। জেলার অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়। এই জেলায় টেরাকোটা, ডোকরা, পাথর প্রভৃতি শিল্পের সঙ্গে বহু পরিবার যুক্ত রয়েছে। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও সেই কাজ করেন। তাই সেইসব শিল্পের প্রসার ঘটার ক্ষেত্রেও গোষ্ঠীর ঋণ অনেকটাই কাজে লাগে। ব্যবসায় উপার্জিত আয় থেকে সংসার চালানোর পাশাপাশি তাঁরা ব্যাঙ্কে ঋণ শোধ করেন। এছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে কিছু ব্লকে শালপাতা থেকে থালা, বাটি তৈরিতেও স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে জেলায় পুরুষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনের কাজও শুরু হয়েছে। নতুন যে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ৬ হাজার ৯০০টি মহিলাদের ও ১০০টি পুরুষদের রাখা হয়েছে।