নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রথমে আয়লা, তারপর আম্ফান। পিছু পিছু এসেছে আরও বেশ কিছু ঘূর্ণীঝড়। যতবারই সাগর থেকে সেই সব ঝড় ধেয়ে এসেছে তত বারই নদীর উত্তাল স্রোতের ধাক্কায় বাঁধ ভেঙে তছনছ হয়েছে। ডুবেছে বিঘার পর বিঘা জমি, ডুবেছে মাছ চাষের পুকুর, গৃহস্থের ঘরবাড়ি এবং সব্জি ও ফলের বাগান। প্রত্যেকবার জল নামার সঙ্গে সঙ্গে সেচদফতর অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে গ্রামে জল ঢোকা বন্ধ করে দিত। কিন্তু স্থায়ী বাঁধ তৈরি করা হয়নি। ফলে ভরা জোয়ারের সময় বা কোটালের বানে ওই অস্থায়ী বাঁধ টপকে মাঝেমধ্যেই গ্রামের জমিতে নোনা জল ঢুকে পড়ত হু হু করে। গ্রামবাসীর দুর্গতির শেষ আর হতো না। অবশেষে মানুষের সেই ভোগান্তি আর দুর্গতিতে দাঁড়ি টেনে দিতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। উত্তর ২৪ পরগনা(North 24 Pargana) জেলার বসিরহাট(Basirhat) মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জ(Hingalganj) ব্লকের দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ধার দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাঁসা নদীর পাড় মেরামত করতে প্রায় ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করল নবান্ন(Nabanna)।
আরও পড়ুন Ganga River Basin প্রকল্পে বাংলার ৫ পুরসভাকে ১১ কোটি টাকা
জানা গিয়েছে, আম্ফানের সময় হিঙ্গলগঞ্জের চকপাটলি গ্রাম পঞ্চায়েতের ট্যাংরামারি ও চকপাটলি এবং হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের খাঁপুকুরে ডাঁসা নদীর বাঁধ ভেঙেছিল। এতে দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট ও বড় মিলিয়ে ১০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। বাঁধ ভেঙে ডুবেছিল চাষের জমি, মাছ চাষের পুকুর ও গৃহস্থের সব্জি ও ফলের বাগান। প্রত্যেকবার জল নামার সঙ্গে সঙ্গে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে গ্রামে জল ঢোকা বন্ধ করা হতো, কিন্তু স্থায়ী বাঁধ তৈরি করা হয়নি। ফলে ভরা জোয়ারের কোটালের সময় ওই অস্থায়ী বাঁধ টপকে মাঝেমধ্যেই গ্রামের জমিতে নোনা জল ঢুকত। এতে সঠিকভাবে ধান চাষও হচ্ছিল না। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মরশুমি সব্জির চাষও কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নোনা জলে বহু নিচু এলাকার বিভিন্ন ফলের গাছ মরে গিয়েছিল। নতুন করে আর গাছ রোপণ করাও যাচ্ছিল না। তাই দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাবাসী স্থায়ীভাবে বাঁধ মেরামতির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সেই দাবি মেনে নিয়েই রাজ্য সরকার এবার ১.২৬ কিমি বাঁধ নতুন করে তৈরি করার অনুমোদন দিয়েছে। এর জন্য খরচ হবে ৮ কোটি ৮৪ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা। ডাঁসা নদীর বাঁদিকের পাড়ে ট্যাংরামারি মৌজায় ০.৩৬ কিমি, খাঁপুকুরে ০.৫২ কিমি ও চকপাটলিতে ০.৩৮ কিমি বাঁধ মেরামতের কাজ হবে। আগামী বর্ষার আগেই এই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন রাজ্যের ২৪২১টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে পুরস্কার ২৫০ কোটি টাকা
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি হিঙ্গলগঞ্জ এলাকার ২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০টি গ্রামের মানুষ। তাঁরা জানিয়েছেন, বাঁধ মেরামত হলে চাষজমি নোনা জলে প্লাবিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। আম্ফানের সময় ডাঁসা নদী পাড়ের ওই তিন জায়গায় ভাঙন ধরেছিল। কয়েকশো একর ধান চাষের জমি নোনা জলে প্লাবিত হয়েছিল। সেই সময় বাঁধ অস্থায়ীভাবে মেরামত করে নদীর জল ঢোকা বন্ধ করা হলেও তা স্থায়ী ও মজবুত ছিল না। কোটালের সময়ে জোয়ারের নোনা জল ঢুকে যেত। নতুন করে বাঁধ তৈরি করা হলে সেই সমস্যা মিটবে। সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। নোনা জল ঢোকা বন্ধ হলে ওই মাঠে ধানচাষের পাশাপাশি সব্জি সহ অন্যান্য ফসলের চাষও সম্ভব হবে। সেচদফতর দ্রুত ওই কাজ শুরু করবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।