কৌশিক দে সরকার: নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) এসেছেন বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের(General Election 2024) প্রচার করতে। গতকাল অর্থাৎ ১ মার্চ সভা করেছেন তিনি হুগলি জেলার আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে। এদিন অর্থাৎ ২ মার্চ তিনি সভা করছেন নদিয়া(Nadia) জেলার কৃষ্ণনগরে(Krishnanagar)। এদিনের সভার লক্ষ্য উনিশের ভোটে জেতা নদিয়া জেলার রানাঘাট(Ranaghat) লোকসভা কেন্দ্র ধরে রেখে তৃণমূলের হাত থেকে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রটি ছিনিয়ে নেওয়া। কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে বিজেপিরই অন্দরে। কেননা উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা ছিল এখন আর তা নেই। আরামবাগের সভাই দেখিয়ে দিয়েছে বাংলায় মোদি ক্রেজ কার্যত অস্তমিত। সভায় লোক যে জায়গা থেকে এসেই ভরাক না কেন, সেই ভিড় দেখে চোখ বুজে বলে দেওয়া যায় না কখনই যে সেই দলটিই জয়ী হবে নির্বাচনে। তাই ভিড়ের ছবি দেখে বিজেপির বহু আদিনেতা কর্মী থেকে নির্বাচনী অভিজ্ঞরা এটা মানতে নারাজ যে মোদি এসে সভা করছেন মানেই নদিয়া কেলার ২টি লোকসভা কেন্দ্রেই জয়ী হবে বিজেপি। কেননা তাঁরা তুলে ধরছেন পরিসংখ্যান। তুলে ধরছেন পঞ্চায়েত ও পুরসভা নির্বাচনের ছবি।
নদিয়া জেলায় আছে দুটি লোকসভা কেন্দ্র। কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট। প্রথমটির ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা নেন সংখ্যালঘুরা। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে মতুয়ারা। উনিশের ভোটে নদিয়া জেলার সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের(TMC) দিকে থাকলেও মতুয়া ভোট গিয়েছিল বিজেপি(BJP) দিকে। আর তার জেরেই দেখা যায় কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল জয়ী হলেও রানাঘাটে খাতা খুলেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই ছবি বদলে যায় অনেকটাই একুশের বিধানসভা নির্বাচন এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতিতে। দেখা যায়, একুশের ভোটে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে থাক ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ইনিশের প্রাপ্ত ভোটের থেকে ৫০ হাজার বেড়ে গিয়েছে। সেখানে বিজেপি ভোট কমে গিয়েছে ৩ হাজার। সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে এখন তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ১ লক্ষ ১৪ হাজার ভোটের। এই ব্যবধান মোদির সভার পরে কতটা কমবে! প্রশ্ন ঘুরছে বিজেপির অন্দরে।
চলে আসা যাক রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে। এখানে উনিশের ভোটে বিজেপি জিতেছিল ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে। কিন্তু একুশের সেই ছবি বদলে গিয়েছে। দেখা যাচ্ছে একুশের ভোটে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট উনিশের প্রাপ্ত ভোটের থেকে ১ লক্ষ ৯ হাজার বেড়ে গিয়েছে। উল্টে বিজেপির ভোট কমে গিয়েছে ২৩ হাজার। এখন সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ১ লক্ষ ২ হাজার। অর্থাৎ তৃণমূলের থেকেই রানাঘাটে বিজেপি এগিয়ে আছে ১ লক্ষ ২ হাজার ভোটে। কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন থাকছে। কেননা একুশের ভোটের পরে হওয়া পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। নাগরিকত্বের ইস্যুতে বিজেপিকে ভোট দেওয়া মতুয়াদের মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার জন্যই যে সেই ঘটনা ঘটেছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এবারেও ভোট বৈতরনী পার হতে বিজেপি একদিকে যেমন CAA তাস খেলছে, তেমনি আধার কার্ড বাতিল করে মতুয়াদের মনে ভয় ধরানোর চেষ্টাও করছে। দেখার বিষয় মতুয়ারা ভয় খান কিনা। ভয় খেলে তাঁরা হয়তো বিজেপিকেই ভোট দেবেন। অন্যথা শিবির বদলাবেন।