নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়(Justice Abhijeet Gangopadhay) বাংলার স্কুলে স্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের মামলায়(Teachers and School Workers Recruitment Scam) যেভাবে হাজার হাজার মানুষের চাকরি বাতিলের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা নিয়ে রাজ্যের তো বটেই, দেশজুড়েও আলোচনা কিছু কম হয়নি। সেই নির্দেশের ওপর সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court) অনেক আগেই স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এবার সেই স্থগিতাদেশ যে আগামী দিনেও বজায় থাকবে সেটাও এবার পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিল দেশের শীর্ষ আদালত। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে বাংলার বাংলার স্কুলে স্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় শুনানি ছিল। সেখানেই বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, কলকাতা হাইকোর্ট ‘অযোগ্য’দের চাকরি বাতিলের যে নির্দেশ দিয়েছিল, তার ওপর স্থগিতাদেশ আপাতত বজায় থাকছে। একই সঙ্গে বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলায় কী কী তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তা আগামী বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে জানাতে হবে এই মামলার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা CBI-কে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, কলকাতা হাইকোর্ট এক ঝটকায় যেভাবে কয়েক হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে তা চূড়ান্ত অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে। তাই সেই নির্দেশের ওপর সুপ্রিম কোর্ট আগেই যে স্থগিতাদেশ দিয়েছে তা বজায় থাকা উচিত। যদিও শুনানি চলাকালীন সময়ে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের তরফে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য দাবি করেন, ২০১৬ সালের নিয়োগ এখনই বাতিল করা হোক। যদিও তার বিরোধিতা করেন শিক্ষকদের পক্ষে আইনজীবী পিএস পাটওয়ালিয়া, পার্থসারথি দেববর্মণরা। তাঁদের দাবি, কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ অন্য পক্ষের বক্তব্য না-শুনেই নির্দেশ দিয়েছে। ৪-৫ বছর চাকরি করার পর বলা হয়েছে তাঁরা আর চাকরি করতে পারবেন না। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদি বলেন, ‘মূল নিয়োগে যদি দুর্নীতি হয়ে থাকে, তবে এক হোক বা দশ–যত বছরই চাকরি করে থাকুক, তা খারিজ হতেই পারে।’ সেই সময় রাজ্যের School Service Commission বা SSC’র তরফে তাঁদের আইনজীবী কুণাল চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘নিয়ম মেনেই নিয়োগ হয়েছে।’
দীর্ঘক্ষণ সওয়াল জবাবের পর অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানায়, আদৌ নিয়োগে কোনও জালিয়াতি হয়েছে কি না, তা নিয়ে CBI’র রিপোর্ট কী বলছে দেখতে হবে৷ এরপরে বেঞ্চ জানায়, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে একটি বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করে এই সব মামলা শুনানির কথা বলা হতে পারে। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের যে বিচারপতি চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন, তিনিও ওই বেঞ্চে থাকতে পারেন। এ ব্যাপারে কোনও সমস্যা নেই। ওই ডিভিশন বেঞ্চ CBI’র তদন্ত রিপোর্ট বিচার বিবেচনা করে ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে প্রাথমিকভাবে দেখবে, আদৌ কোনও জালিয়াতি হয়েছে কি না? হলেও কোন কোন ব্যক্তির নিয়োগে হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব মামলার নিষ্পত্তি হওয়াটাই প্রয়োজন। তারপর হাইকোর্টের পর তো সুপ্রিম কোর্ট আছেই। এই প্রস্তাব মেনে নেন সব পক্ষই। তবে আগামী বৃহস্পতিবার দেশের শীর্ষ আদালতে CBI কী বলে, তা জেনেই পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া হবে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।