নিজস্ব প্রতিনিধি: মল্লভূম বাঁকুড়া জেলার(Bankura District) বিষ্ণুপুর মহকুমার সদর ব্লকের একটি গ্রাম পঞ্চায়েত হল দ্বারিকা-গোঁসাইপুর। বাম জমানায় সেখানেই ১৭৩ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় Bishnupur Industrial Park। সেখানে মোট ১২টি শিল্প সংস্থা নিজেদের কারখানা তৈরি করে। প্রথম দিকে এই শিল্পতালুকে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ায় অনেকেই এগিয়ে আসে কারখানা খোলার জন্য। কিন্তু পরে সেই ছাড় তুলে দেওয়ায় অনেকেই চালু কারখানা বন্ধ করের দেয়। তার জেরে এই শিল্পপার্ক ঘিরে যে আশা দেখা গিয়েছিল তা স্থিমিত হয়ে পড়ে। কিন্তু এখন সেখানেই টাটারা(TATA) একটি কারখানা কিনে নিয়ে তা মেরামত করছে নতুন করে তালু করার জন্য। আর তার জেরে ফের এই শিল্পপার্ক ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। এই কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও। কারখানা চালানোর জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা, আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারের শিল্প বিকাশ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দ্বারিকায় একটি চারতলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও তৈরি করা হয়েছে।
টাটাদের এই বন্ধ কারখানা কিনে তা মেরামত করে ফের চালু করার বিষয়টি এখন লোকসভা নির্বাচনের সময়ে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে প্রচারের মস্ত বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) কাছে। এমনিতেই এই কেন্দ্রে এবার এক প্রাক্তন দম্পতির লড়াই সকলের নজর টানছে। বিজেপির হয়ে এখানে প্রার্থী হয়েছেন সৌমিত্র খাঁ। আর তৃণমূলের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন সৌমিত্রের প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মন্ডল(Sujata Mondol)। ৫ বছর আগে এই সুজাতাই বিষ্ণুপুর চষে ফেলে জিতিয়েছিলেন সৌমিত্রকে। কিন্তু এবার তাঁরা পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ। সুজাতা তাঁর প্রচারে কিন্তু টাটাদের কারখানা কিনে তা চালু করার বিষয়টি বেশ ভাল ভাবে তুলে ধরছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে শিল্প আনার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তার উদ্যোগেই আজকে টাটার মতো সংস্থা বিষ্ণুপুরে লগ্নি করতে এসেছে। দ্বারিকায় টাটার মতো সংস্থা কারখানা চালু করবে। তাতে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। আরও যে ক’টি বন্ধ কারখানা রয়েছে, আগামী দিনে সেগুলোও যাতে চালু করা যায় তার জন্য রাজ্য সরকার সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে। শিল্পতালুকে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।’
বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ অবশ্য এর ঠিক উল্টো কথা বলেন। তাঁর দাবি, ‘দ্বারিকায় তৃণমূল কংগ্রেসের আমলেই সিংহভাগ কারখানায় ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে। তৃণমূলের দাদাগিরির কারণে এরাজ্য থেকে ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে শিল্পের জোয়ার বইছে।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি কিছুটা হলেও ভিন্ন। তাঁদের বক্তব্য, বাম জমানায় ওই শিল্পপার্কে ৩টি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা চালু হয়েছিল। সেই ৩টি কারখানা থেকে এলাকায় মারাত্মক দূষণ ছড়িয়ে পড়ছিল। তার জেরে এলাকাবাসী বিক্ষোভ দেখায়। পরিবেশ দফতর থেকে তখন কারখানাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা এখন চাইছেন দূষণ ছড়াবে না এমন শিল্পই সেখানে গড়ে উঠুক এবং তবে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিক। তাঁরা খুশি যে টাটারা সেখানে কারখানা কিনে তা চালু করছে। এতে আগামী দিনেও সেখানে অনান্য সংস্থাও কারখানা খুলতে এগিয়ে আসবে। তাঁরা তাই এই শিল্পপার্ক নিয়ে বিজেপির মতো নেতিবাচক রাজনীতি চান না।