নিজস্ব প্রতিনিধি: আগামিকাল থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে এপ্রিল মাস। এই মাসেই আছে বাঙালির নববর্ষ। আর ঠিক তার পরের দিন রয়েছে বাসন্তী পুজা। তারপর অন্নপূর্ণা পুজা। ১৭ এপ্রিল পড়েছে রামনবমী(Ram Navami)। আর তার ঠিক ২ দিনের মাথায় অর্থাৎ ১৯ এপ্রিল দেশে প্রথম দফার ভোট। প্রথম দফার ভোট বাংলার বুকেও। সেই রামনবমীকে মাথায় রেখে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা VHP এই রাজ্যে রামমহোৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাও এক আধ দিনের জন্য নয়, টানা ৯ দিন ধরে সেই উৎসব পালিত হবে। আগামী ৯ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে সেই মহোৎসব। আর এখানেই কপালে ভাঁজ পড়েছে এ রাজ্যের পুলিশ থেকে প্রশাসকদের কপালে। কেননা গত কয়েক বছরে এই রামনবমীকে কেন্দ্র করে বাংলার(Bengal)বুকে বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের বুকে একাধিক জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছিল। এবার ভোটের আবহের সেই একই পরিস্থিতি তৈরি হলে তা যে গেরুয়া ব্রিগেডের পক্ষে হাওয়া তোলার পক্ষে যথেষ্ট সেটা কে না আর জানে। রবিবার খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) গলাতেও উঠে এল সেই সতর্কবার্তা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী নদিয়া জেলার ধুবুলিয়াতে দলের প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের হয়ে করা প্রচার সভা থেকে সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অন্নপূর্ণা পুজোর পরের দিন বাংলায় দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘রাম নবমীর মতো এবারে অন্নপূর্ণা পুজোর পরের দিন দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করবে। সবাইকে বলব সতর্ক থাকুন। ইট মারলে পাটকেল মারবেন না। ভোটের বাক্সে দেখিয়ে দিতে হবে বাংলার গর্জন কী জিনিস। বিজেপি(BJP) ভোটের জন্য সব পারে। মতুয়া থেকে মুসলিম, হিন্দু সকলের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে। তাই সবাইকে সাবধান করলাম।’ নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী নিজে এদিনের সভা থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করার পরই প্রশাসনিক স্তরেও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়েছে। কেননা মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব নেটওয়ার্ক অত্যন্ত স্ট্রং। অতীতেও বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, উনি আগে থেকেই ঘটনার আন্দাজ পেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় বাংলায় অশান্তির পরিবেশ এড়ানো গিয়েছে। অভিমত রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের।
ঠিক কী নিয়ে আশঙ্কা মুখ্যমন্ত্রীর? এবারে লোকসভা নির্বাচনের আবহে রামনবমী তিথিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রকে নিয়ে জনমানসে ভাবাবেগ ফেরাতে বাংলার বুকে ৯দিনের কর্মসূচী নিয়েছে VHP। সেই সব কর্মসূচীর মধ্যে থাকছে, বাংলার বুকে ৫ হাজার জায়গায় শোভাযাত্রা বার করা, আলোচনা সভা, পুজাপাঠসহ নানাবিধ অনুষ্ঠান। হিন্দুসমাজের কাছে রামচন্দ্রের আদর্শ ছড়িয়ে দিতে বাংলায় রামমহোৎসব পালিত হবে। ভারতীয়ত্বের অস্মিতা অটুট রাখার লক্ষ্যে রাজ্যের ব্লক পর্যায়ে পালিত হবে রামনবমী। অন্তত এমনটাই দাবি, VHP কর্তাদের। বাংলায় রামমহোৎসব বা হিন্দুসমাজের কাছে রামচন্দ্রের আদর্শ ছড়িয়ে এবং ভারতীয়ত্বের অস্মিতা অটুট রাখা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই কারও। যাবতীয় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে বাংলার বুকে ৫ হাজার জায়গায় শোভাযাত্রা বার করার সিদ্ধান্ত। কেননা বার বার দেখা গিয়েছে রাম নবমীর শোভাযাত্রা থেকেই যাবতীয় অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে।
এবার ভোটের জন্য দেশজুড়ে আদর্শ আচরণ বিধি লাগু হয়ে গিয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন দুইই চলে গিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারে। তাই এবারে বাংলার বুকে ওই ৫ হাজার মিছিল বার করতে হলে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিতে হবে। সেই অনুমতি কমিশন দেবে কী দেবে না সেটা তাঁদের বিষয়। তবে বাংলার পুলিশ ও প্রশাসন এখন থেকেই এই মিছিলের বিষয়টি নিয়ে সতর্কিত। তাঁদের আশঙ্কা, হাওড়া-হুগলি শিল্পাঞ্চল, দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চল, খড়গপুর-মেদিনীপুর শিল্পাঞ্চল, ব্যরাকপুর শিল্পাঞ্চল এলাকা ছাড়াও বসিরহাট, বেলডাঙা, সিউড়ি, কলকাতার মতো এলাকায় অশান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হতে পারে। তাই প্রাথমিক ভাবে মিছিলে সায় না দেওয়ার পক্ষেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দেখা হবে পুরাতন রীতি মেনে কোন কোন এলাকায় মিছিল বার করার অনুমতি চাওয়া হচ্ছে। সেই সব মিছিলে অনুমতি থাকবে বা দেওয়া হবে। কিন্তু নতুন কেউ মিছিল বার করতে চাইলে তা দেওয়া হবে না।