নিজস্ব প্রতিনিধি: আগামী ১২ মার্চ মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনা(North 24 Pargana) জেলার হাবড়াতে(Habra) প্রশাসনিক সভা করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সেই হাবড়া যেখানকার বিধায়ক রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্য ও বনমন্ত্রী তথা জেলবন্দী তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেই সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী উত্তর ২৪ পরগনা সহ রাজ্যের একাধিক জেলার কয়েক হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের উদ্বোধন করতে চলেছেন। সেই সঙ্গে এই সভা থেকে আমজনতার হাতে তিনি সরকারি পরিষেবাও পৌঁছে দেবেন। কিন্তু এই সব ছাপিয়ে গিয়েছে এই সভার রাজনৈতিক গুরুত্ব। কেননা তৃণমূল(TMC) সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সভায় থাকছে বড় চমক। দল বদল থুড়ি ফুল বদলের সম্ভাবনা থাকছে এই সভায়। একই সঙ্গে এই সভা থেকে মতুয়াদের উদ্দেশ্যে বড় বার্তা দিতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্তত তৃণমূল সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে।
রাজ্যের যে দুটি জেলায় মতুয়া সমাজের মানুষদের বসবাস সব থেকে বেশি তার মধ্যে অন্যতম হল উত্তর ২৪ পরগনা। এই জেলার বনগাঁ মহকুমার পুরোটাই কার্যত মতুয়া(Matua) অধ্যুষিত। এই মতুয়া সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। কেননা তাঁদের পূর্ব পুরুষেরা পূর্ববঙ্গ থেকে এদেশে এসেছিলেন। কেউ এসেছেন দেশ ভাগের সময়ে, কেউ বা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল একাধিকবার নিয়ম করে জানিয়ে দিয়েছে, এদেশে বসবাস করা সব মতুয়াই এদেশের নাগরিক। কেননা তাঁদের সকলেরই ভোটার কার্ড রয়েছে, ভোটার লিস্টে নাম রয়েছে, তাঁরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন এবং তাঁদের রেশন কার্ড রয়েছে যা দেখিয়ে তাঁরা রেশন তোলেন। এমনকি তাঁদের অনেকেরই প্যান কার্ড আছে, আধার কার্ডও আছে। সেই হিসাবে তাঁরা নাগরিক। তাঁরা যদি নাগরিক না হতেন তাহলে কী এই সব সুবিধা পেতেন! যুক্তি তৃণমূলের। যদিও এই যুক্তি মানতে রাজী নন সব মতুয়া। তাই মতুয়া সমাজে এখনও নাগরিকত্বের দাবি ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে।
এই নাগরিকত্বের দাবিকে হাতিয়ার করেই উনিশের ভোটে মতুয়া ভোট নিজেদের ঝুলিতে টেনেছিল পদ্মশিবির। কিন্তু CAA আইন তৈরির পরেও সেই আইন লাগু হয়নি সারা দেশের পাশাপাশি বাংলার বুকে। শুধুমাত্র তা লাগু হয়েছে অসমে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি এই রাজ্যে বেঁচে থাকতে CAA ও NRC কোনওটাই লাগু হতে দেবেন না। আবার রাজ্য সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই আইন লাগু করা সম্ভবও নয়। আর তাই বিজেপির তরফে CAA নিয়ে এবং মতুয়াদের নাগরিকত্ব প্রদানের দাবি নিয়ে যাই বলা হোক না কেন, বাস্তবে কিছুই হয়নি। আর এখন মতুয়া সমাজের একটা বড় অংশই মনে করছে বিজেপি(BJP) কার্যত তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদানের আশ্বাস দিয়ে তাঁদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করে চলেছে। কার্যত তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। আর তাই মতুয়ারাও বিজেপির দিক থেকে আস্তে আস্তে মুখ ঘোরানো শুরু করে দিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বিগ্ন যে, ২৪’র ভোটে বনগাঁ থেকে বিজেপির প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও জিতবেন কিনা সন্দেহ! এই আবহে মমতা হাবড়ার সভা থেকে মতুয়াদের কী বার্তা দেন সেই দিকেই তাকিয়ে থাকবেন সকলে।