নিজস্ব প্রতিনিধি: জল ছাড়া জীবন সম্ভব নয়, সম্ভব নয় মেলাও। সেই সত্যিটাই এবার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াল চলতি বছরের পৌষ মেলার(Poush Mela) জন্য। বোলপুরের(Bolpur) পৌষমেলার আয়োজনের দায়িত্বে থাকা শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট(Shantiniketan Trust) জানিয়েছে, বিশ্বভারতীর(Viswabharati University) জলাশয় ভুবনসাগর(Bhuwansagar) মুখ ঢেকেছে কচুরিপানায়। সেখান থেকে মেলার জন্য পর্যাপ্ত জল পাওয়া যাবে না। আর পর্যাপ্ত জল ছাড়া পৌষমেলা আয়োজন সম্ভব নয়। জলাশয় সংস্কারে কোনও হেলদোল নেই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। ফলে এবছর পৌষমেলা হওয়া নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা। মেলা আয়োজন নিয়ে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও শান্তিনিকেতন কর্মী পরিষদের বৈঠক হলেও কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি। আগামী দিনে জলের বিকল্প ব্যবস্থা করে পৌষমেলা আয়োজন করতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কী ভূমিকা নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে সকলে।
৭ পৌষ অর্থাৎ ইংরেজির ২৩ ডিসেম্বর থেকে প্রতিবছর পৌষমেলা শুরু হয়। কোভিডের ধুয়ো তুলে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরপর দু’বছর পৌষমেলা আয়োজন থেকে বিরত থাকে। কার্যত সেই সময় থেকেই বিশ্বভারতীতে গেরুয়া সংস্কৃতির দখলদারী নীতি যেমন তীব্র হয়েছে তেমনি রবীন্দ্র ও শান্তিনিকেতনের নিজস্ব কৃষ্টি ধ্বংসের নিদারুণ প্রচেষ্টাও চলছে। সেই প্রচেষ্টারই অঙ্গ যেনতেন প্রকারণে হোক পৌষ মেলা বন্ধ করে দেওয়ার প্রয়াস। ২০১৯ সালে শেষবার পৌষমেলা হয়েছিল। কোভিডের সময়ে পরপর দু’বছর পৌষমেলা আয়োজন থেকে বিরত থাকে বিশ্বভারতী। পরিবর্তে ঘরোয়াভাবে প্রথা মেনে পৌষ উৎসব আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পৌষমেলার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। ট্রাস্টের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা করে শান্তিনিকেতন কর্মী পরিষদ ও কর্তৃপক্ষ পৌষমেলার আয়োজন করে।
চলতি বছরের ২৯ জুন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে পৌষমেলার আয়োজন নিয়ে চিঠি লেখেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। কিন্তু এখন বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি ও শান্তিনিকেতনের কবিগুরু হস্তশিল্প সমিতি অভিযোগ তুলেছে, গত জুলাই মাসের বৈঠকে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট কর্মী পরিষদকে জানিয়েছিল পর্যাপ্ত জল ছাড়া কোনওভাবেই এত বড় মেলার আয়োজন সম্ভব নয়। তারপরও কর্তৃপক্ষ জলাশয় সংস্কারে সদর্থক ভূমিকা নেয়নি। বিশ্বভারতীর জলাশয় ভুবনসাগর যা স্থানীয়দের কাছে বড়বাঁধ নামে পরিচিত সেটিই পৌষমেলায় জলের যোগান দেয়। অথচ এখনও পর্যন্ত সেই জলাশয় সংস্কারের কোনও উদ্যোগই নেয়নি। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় মেলার আয়োজন করতে চাইছে না বলেই জলাশয়ের সংস্কার করছে না, এমনই অভিযোগ বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি ও শান্তিনিকেতনের কবিগুরু হস্তশিল্প সমিতির। ভুবনডাঙা লাগোয়া বিশ্বভারতীর বড়বাঁধ, লালবাঁধ সহ জলাশয়গুলি সংস্কারের অভাবে কচুরিপানায় ঢেকেছে। দীর্ঘদিন ধরে তা সংস্কার না হওয়ায় পুকুরের জলও কমে গিয়েছে।
শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনারের দাবি, ‘যে কোনও বড় মেলা আয়োজিত হয় সাগর, নদী বা জলাশয়ের পাড়ে। বিশ্বভারতীর জলাশয়গুলি বর্তমানে কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। তাই মাত্র ছ’টি জলের ট্যাপ দিয়ে এত বড় মেলার আয়োজন করা সম্ভব নয়। মেলায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়, পর্যাপ্ত জল না থাকলে হাহাকার পড়ে যাবে।’ এব্যাপারে বিশ্বভারতীর এক আধিকারিক বলেন, এই মুহূর্তে জলাশয়গুলি সংস্কার সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। অর্থ বরাদ্দ না হলে সংস্কার সম্ভব নয়। সেকারণে এই দোলাচলের মাঝে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা ঘিরে ঘোর অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। কবিগুরু হস্তশিল্প সমিতির সম্পাদক আমিনুল হুদা জানিয়েছেন, ‘পুকুর সংস্কারে কর্তৃপক্ষের এখনও কোনও ভূমিকা দেখছি না। পৌষমেলা অনিশ্চিত হলে গত দু’বছরের মতো এবারেও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ময়দানে বিকল্প পৌষমেলা আয়োজনের চিন্তাভাবনা শুরু করতে হবে।’