নিজস্ব প্রতিনিধি: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের(Presidential Election) ভোটদানের দিন বাংলার বিধানসভায়(West Bengal State Assembly) তরজায় জড়াল তৃণমূল(TMC) ও বিজেপি(BJP)। কেন্দ্রের শাসক দলের তরফে এদিন অভিযোগ তোলা হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee) রাজ্য বিধানসভায় কনভয় নিয়ে ঢুকে পড়েন ভোট দেওয়ার জন্য। আবার রাজ্যের শাসক দলের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে এদিন বাংলার বিজেপির বিধায়কেরা আদিবাসীদের প্রতীক পানচি গায়ে ভোট দিতে এসেছিলেন যা বিধিভঙ্গের সামিল। এই দুই অভিযোগ ঘিরেই এদিন সরগরম থাকল বাংলার বিধানসভা। আবার দুই পক্ষই এই নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিধিভঙ্গের অভিযোগ দায়ের করেছে।
সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানের জন্য রাজ্য বিধানসভায় আসেন রাজ্যের সব বিধায়ক এবং তৃণমূলের সাংসদেরা। সেখানে ভোট দিতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিজেপি কোনও অভিযোগ তুলতে না পারলেও তাঁরা অভিষেকের বিরুদ্ধে সরব হন বিধিভঙ্গের বিরুদ্ধে। বিজেপির অভিযোগ, অভিষেক আইন ভেঙে তাঁর বিশাল বড় গাড়ির বহর নিয়ে বিধানসভা ভবনে এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটদান করতে। যা কি না নির্বাচন কমিশনের আইন বিরোধী। এদিন এই মর্মে অভিষেকের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন ভাঙার অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের এ রাজ্যে নির্বাচনের পর্যবেক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন দ্রৌপদী মুর্মুর নির্বাচনী এজেন্ট সুদীপ কুমার মুখোপাধ্যায়। যদিও তৃণমূল তাঁর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে সুদীপবাবু লিখেছেন, ‘আমি সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছি, যিনি বিধানসভা চত্বরে অন্তত ১৫টি গাড়ির কনভয়, একটি পাইলট কার এবং আরও অনেকজনকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে ঢুকেছেন। এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের আরোপিত আইন ভাঙা হয়েছে। আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করতে বলছি।’ যদিও তৃণমূল সুদীপের এই অভিযোগকে অস্বীকার করে পালটি দাবি করা হয়েছে। রাজ্য বিধানসভায় শাসক শিবিরের মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষ জানিয়েছেন, ‘অভিষেক কোনও নিয়ম ভাঙেননি, তিনি জেড প্লাস পর্যায়ের নিরাপত্তা পান। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা অবশ্যই এসেছিলেন। কিন্তু অভিষেক বিধানসভায় প্রবেশ করার পরই তাঁরা বেরিয়েও যান। বিজেপি শুধু অভিযোগ করার জন্যই এই অভিযোগ করছে। এর কোনও সত্যতা বা ভিত্তি নেই।’
আবার এদিনই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটদান প্রক্রিয়া চলাকালীনই বিজেপির বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ তোলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, বিজেপি বিধায়কেরা আদিবাসীদের প্রতীক হিসেবে যে পানচি গায়ে দিয়েছিলেন, তা নির্বাচনী এজেন্টেরও গলায় রয়েছে। এই ঘটনা কার্যত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটারদের ‘প্রভাবিত’ করা। বঙ্গের বিজেপি বিধায়করা এদিন আদিবাসী সংস্কৃতির প্রতীক ‘পাঞ্চি’ পরে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে বালুরঘাটের অর্থনীতিবিদ বিধায়ক অশোক লাহিড়ি, প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা বিধায়ক অশোক ডিন্ডা, মালদহের আদিবাসী বিধায়ক জুয়েল মুর্মু থেকে শুরু করে দার্জিলিংয়ের আদিবাসী বিধায়ক জিম্বারা ‘পাঞ্চি’ পরে ভোটদান করেন। বিজেপির পক্ষ থেকে ‘ইলেকশনে এজেন্ট’ করা হয়েছিল পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়কে। তিনিও ‘পাঞ্চি’ পরে ভোট পরিচালনার কাজ করছিলেন। বিষয়টি নজরে আসে তৃণমূল পরিষদীয় দলের। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা বিষয়টি নজরে আনেন নির্বাচন কমিশনের। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে ফোন করে অভিযোগ জানান রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও নারী শিশু সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা।
এই বিষয়ে চন্দ্রিমা বলেন, ‘আমরা দেখলাম বিজেপি বিধায়ক যিনি রাষ্ট্রপতি ভোটে ওদের এজেন্ট হয়েছেন, তিনি আদিবাসী সংস্কৃতির প্রতীক ‘পাঞ্চি’ পরে বসে আছেন। তা ছাড়া আমরা অভিযোগ জানিয়েছি, যে বিজেপি বিধায়করা ‘পাঞ্চি’ পরে ভোট দিতে এসেছেন। কিন্তু নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী ভোটের সময় কোনও ‘সিম্বল’ নিয়ে ঢোকা যায় না। যদিও এটা কোনও ‘সিম্বল’ নয়, কিন্তু এটা রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যে সম্প্রদায়ের, তার সিম্বলিক। যা পরা যায় না।’ আবার শশী পাঁজা জানিয়েছেন, ‘ভোটকেন্দ্র সব সময় নিরপেক্ষ রাখতে হবে। কিন্তু কোন ভাবেই বিজেপি পরিষদীয় দল ভোটকেন্দ্রকে নিরপেক্ষ রাখতে দিচ্ছে না। সেই কারণেই আমরা অভিযোগ জানিয়েছি।’ যদিও এই বিষয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, ‘আদিবাসী ভোট ভেঙে যাওয়ার ভয় পাচ্ছে তৃণমূল। তাই আমাদের বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ করছে ওরা। এ সব অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। আমরা আদিবাসী সাংস্কৃতিকে সম্মান দিয়ে ‘পাঞ্চি’ পরে ভোট দিয়েছি। কোনও রাজনৈতিক প্রতীক সেখানে নেই।’