নিজস্ব প্রতিনিধি: গ্রাম বাংলার(Rural Bengal) রায় বলছে জোড়াফুলের ঝুলিতে গিয়েছে ৫২ শতাংশ মানুষের ভোট। আর এই প্রাপ্তির ঝুলিতে ভর দিয়েই এবার বাংলার শাসক দল একুশে জুলাইয়ের মহামঞ্চ থেকে তুলতে চলেছে নয়া শ্লোগান ‘২৪-এ চাই ৪২’। সম্ভবত তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) নিজেই এই শ্লোগানের সুর তুলে দেবেন চড়া ভাবে। উনিশের লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূলের(TMC) শ্লোগান উঠেছিল ‘৪২-এ ৪২’। কিন্তু সেই শ্লোগান বাস্তবের ফলে মেলেনি। এবার কিন্তু অনেক বেশি সাবধানী। আত্মবিশ্বাসীও। কেননা ৫২ শতাংশের ভোটের পাশাপাশি হাতে আছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, সবুজসাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, মেধাশ্রী, কৃষকবন্ধু, মৎস্যবন্ধু, জয় জোহর, জয় বাংলা, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড। তাই এবারের লক্ষ্য ৪২-এ ৪২।
আরও পড়ুন অধিকারীদের ঝাঁজ কমছে নিজেদের জেলাতেই, খুশ বিক্ষুব্ধরা
পঞ্চায়েতের রায় বলছে এবারে তৃণমূলের ৫২ শতাংশের পাশাপাশি বিজেপি(BJP) পেয়েছে ২২ শতাংশ ভোট। বামেরা(Left) পেয়েছে ১২ শতাংশ ভোট। কংগ্রেসের(INC) ঝুলিতে গিয়েছে ৬ শতাংশ ভোট। আইএসএফের ভোট প্রাপ্তি ধরলে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জুটির প্রাপ্ত ভোট ২০ শতাংশ। এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের পক্ষে লোকসভায় ৪২টি আসন বার করা কিন্তু খুব কঠিন কাজ হবে না। এটা সত্যি যে বাম ও কংগ্রেস উভয়েরই ভোট প্রাপ্তির হার বেড়েছে। কিন্তু সেটা এতটা বেড়ে যায়নি যে তাঁরা কোনও লোকসভা কেন্দ্র জিতে ফেলবে। আবার বিজেপিও তাঁদের জেতা সব আসনেই পায়ের নীচে মাটি হারিয়ে ফেলেছে। আবার লোকসভা নির্বাচনের সময়ে একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়াও কাজ করবে বিজেপির বিরুদ্ধে। আর সেই জায়গাতে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের পক্ষে খুব অসুবিধা হবে না রাজ্যের বেশির ভাগ আসনে জয়ের মুখ দেখতে। বাম-কংগ্রেস এখন যতই জোত গড়ে লড়াই করুক না কেন লোকসভা নির্বাচনে মালদা ও মুর্শিদাবাদের বাইরে তাঁরা দুই দলের ভোট একবাক্সে আনতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
আরও পড়ুন ভোট মিটতেই কী কর্মী নিয়োগের পথে মমতার সরকার, শুরু জল্পনা
উনিশের ভোটে বাংলা থেকে বিজেপি জিতেছিল ১৮টি আসন। এই আসন জেলাত নেপথ্যে কাজ করেছিল ৩টি ভোট ব্যাঙ্ক। মতুয়া, রাজবংশী ও আদিবাসী ভোট। এর সঙ্গে ছিল পাহাড়ের ভোট। পাহাড় যে আগেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে সেটা দার্জিলিংয়ের পুরসভা এবং জিটিএ নির্বাচনেই বেশ বোঝা গিয়েছে। এবারেও পাহাড়ের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বন্ধু অনীত থাপার দলের বিরুদ্ধে বিজেপি জোট গড়ে তুলেছিল। কিন্তু সেই জোট মুখ থুবড়ে পড়েছে। মতুয়া ভোট যে হাতছাড়া হয়েছে সেটা বনগাঁ, কল্যাণী ও রানাঘাট মহকুমার ভোটের রেজাল্টই বলে দিচ্ছে। রাজবংশীরাও যে সেভাবে বিজেপির পাশে নেই তা বলে দিচ্ছে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও উত্তর দিনাজপুরের ভোট চিত্র। আদিবাসীরাও যে বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছে আলিপুরদুয়ার, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামের ভোটচিত্র। যে জঙ্গলমহলে গত এক দেড় বছর ধরে কুড়মিদের আন্দোলন তুঙ্গে উঠেছিল সেই কুড়মিরাও ধাক্কা খেয়েছে তাদের অনড় মনোভাব, আমজনতাকে হয়রান ও ভোগান্তির মুখে ফেলে দেওয়া অবরোধ-বিক্ষোভের এবং সর্বোপরি বিজেপির সঙ্গে তলায় তলায় যোগাযোগ রেখে চলার জন্য। এই অবস্থায় বিজেপির পক্ষে জেতা আসনও ধরে রাখা খুব কঠিন। আর বাম-কংগ্রেস জোটের কোনও লোকসভা কেন্দ্র বার করা তার থেকেও কঠিন। তৃণমূলের সামনে কিন্তু ‘২৪-এ ৪২’ করার রাস্তা তৈরি হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটও তাঁদের পাশেই থাকছে। ফিরছে মতুয়া, রাজবংশী ও আদিবাসী ভোটও।