নিজস্ব প্রতিনিধি: বিরোধীরা যতই হই-হট্টগোল, চিৎকার-চেঁচামেচি, অভিযোগ, সমালোচনা করুক না কেন, বাংলার মানুষ তৃণমূলকেই(TMC) সমর্থন করবে। বিশেষ করে গ্রামের মানুষেরা। পঞ্চায়েত ভোটের(Panchayat Election) আগে এমনটাই বিশ্বাস রাজ্যের শাসকদলের নেতাকর্মী থেকে সাংসদ ও বিধায়কদের মায় মন্ত্রীদেরও। নেতৃত্বের ধারণা, গ্রামের ভোটব্যাঙ্ক অটুট থাকবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে। এই প্রেক্ষাপটেই বুথকেন্দ্রিক ভোটের হিসেব-নিকেশ কষতে শুরু করে দিয়েছিলেন জোড়াফুলের নেতারা। এমনকি দলের টার্গেটও প্রতিটি বুথে ন্যূনতম ৫১ শতাংশ ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে ফেলা। এমনকি যে সব এলাকায় মানুষ বিরোধীদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেই সব এলাকার বুথে বুথে যাতে তৃণমূলের ঝুলিতে ৮০-৯০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়ে সেই টার্গেটও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এইসব কিছুতেই এদিন একটা বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন ঝুলিয়ে দিল সাগরদিঘী(Sagardighi Bye Election)। সেখানে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী বায়রণ বিশ্বাস জয়ী হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে। সন্দেহ নেই, ‘সাগরদিঘী মডেল’ রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আগে বাম-কংগ্রেস(Left-Congress) শিবিরকে যেমন উজ্জিবীত করবে তেমনি কিছুটা হলেও ভাবাবে তৃণমূলকেও। কেননা বাম ও কংগ্রেস এই জোট বেঁধে পঞ্চায়েত ভোটে নামলে অনেক ছবিই বদলে যাবে।
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। খুব শীঘ্রই যে সেই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা যাবে এমনটাও মনে করছেন না রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকেরা। তবে সেই নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রাখছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাজ্যের সর্বত্র নির্বাচনী কর্মসূচি ঠিক করে ফেলেছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই তৃণমূল শুরু করেছে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাস মিলিয়ে হাজার দেড়েক গ্রাম চষে ফেলেছেন ‘দিদির দূত’রা। আবার তৃণমূলের দেখানো পথে হেঁটেই ‘গ্রাম সম্পর্ক’ অভিযানে নেমেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি(BJP)। পিছিয়ে নেই সিপিএম, কংগ্রেসও। তাঁরা গ্রামমুখী বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছে। আর সেই জায়গাতেই এদিন সাগরদিঘীতে বাম-কংগ্রেস জোট যে জয়ের মুখ দেখেছে তা নিঃসন্দেহে তৃণমূলের কাছে যততা অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠল ঠিক তততাই উজ্জীবিত করল বাম-কংগ্রেসকে।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। একদিকে, পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের কাজের রিপোর্ট যেমন নেওয়া হচ্ছে, তেমনই নেতাদের আচরণ ও জনসংযোগের বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখছেন নেতারা। ভোট কৌশলী সংস্থা আইপ্যাক নিয়মিত রিপোর্ট দিচ্ছে তৃণমূলকে। দলীয় সূত্রে খবর, কোনও বুথে সাংগঠনিক শক্তি আরও মজবুত করতে হবে, কোথাও জনসংযোগ আরও বাড়াতে হবে—সেসম্পর্কে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল চাইছে, বুথ প্রতি ন্যূনতম ৫১ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করতে। তারপর সেই ভোটের শতাংশের পরিমাণ আরও বাড়াতে। বুথ শক্তিশালী হলে সংগঠন অনেক বেশি মজবুত হবে বলে বিশ্বাস জোড়াফুল শিবিরের। তাঁরা বলছেন, শেষ সব ক’টি নির্বাচনে বাংলার মানুষ যেভাবে তৃণমূলকে সমর্থন জুগিয়েছেন, তার নিরিখে বলা যায়, জেলা পরিষদগুলি জোড়াফুলের হাতেই থাকবে। কিন্তু এদিনের ফলাফল এই সব কিছুকেই কার্যত কিছুটা প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল। বাম-কংগ্রেস শিবির এবার ‘সাগরদিঘী মডেল’কেই সামনে রেখে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই করবে। সেক্ষেত্রে মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, বীরভূম, পুরুলিয়া, কোচবিহারের মতো জেলায় তৃণমূলকে যে ক্টহিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহে নেই।