নিজস্ব প্রতিনিধি: চাপের মুখে নতিস্বীকার। বাংলা(Bengal) ছাড়ছেন রাহুল গান্ধি(Rahul Gandhi)। ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায়(Bharat Jodo Nyay Yatra) এদিন অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারি সকালেই বাংলায় পা রেখেছেন রাহুল। এদিন তাঁর কোচবিহারে র্যালি ও জনসভা করার কথা ছিল। কিন্তু সেই সব কিছু বাতিল করে তিনি দিল্লির পথ ধরছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) বাংলায় আর ছিঁটেফোঁটো হচ্ছে না ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা। বড়সড় ধাক্কা প্রদেশ কংগ্রেসের বিজেপি ও বাম বান্ধব নেতাদের। কার্যত মমতার চাপের কাছেই যে নতি স্বীকার করলেন রাহুল সেটা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। জানা গিয়েছে, এদিনই বাগডোগরা হয়ে দিল্লি ফিরে যাচ্ছেন রাহুল।
গতকালই মমতা চূড়ান্ত ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন কংগ্রেসের(INC) বিরুদ্ধে। কলকাতা থেকে বর্ধমান যাওয়ার পথে তিনি হাওড়ার ডুমুরজলার হেলিপ্যাডে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছিলেন, ‘কারো সঙ্গে আমার কোনও কথা হয়নি। আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ওরা প্রথমেই তা প্রত্যাখ্যান করেছে। জোটটা কারও একার নয়। তখন থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বাংলায় আমরা একা চলব। বাংলার ব্যাপারে আমার সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও সম্পর্ক নেই। জাতীয় স্তরে কী করব না করব, সেটা ভোটের পর ভাবব। আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দল। বিজেপিকে হারানোর জন্য যা করার করব। লোকসভা ভোটে বাংলায় কোনো জোট হচ্ছে না। জাতীয় স্তরে কী হবে, তা ভোটের পর দেখা যাবে। এই যে রাহুলের যাত্রা বাংলায় আসছে, ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গী হিসেবে আমাদের জানায়নি। ওরা রাজ্যে মিছিল করছে। আমি ইন্ডিয়া জোট সঙ্গী। সৌজন্যের খাতিরে একবার জানায়নি যে, দিদি আপনার রাজ্যে মিছিল হচ্ছে। বিজেপি-কে হারানোই আমার লক্ষ্য, বিজেপি-কে হারিয়েই ছাড়বো। কংগ্রেস গোটা দেশে ৩০০ আসনে লড়াই করুক। বাকি আসনগুলিতে ইন্ডিয়া জোটের আঞ্চলিক দলগুলো যে যেখানে শক্তিশালী, তারা সেখানে লড়াই করুক। ৩০০ আসনে ওরা লড়াই করুক। বাকি আমনে আঞ্চলিক দলগুলো লড়াই করবে। সেখানে কেউ মাথা ঘামাবে না। যদি সেখানে কেউ নাক গলায় তাহলে আমি বুঝে নেব।’
বস্তুত মমতা জোট ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে দেওয়ায় গতকালই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে কংগ্রেস। দলের নেতা জয়রাম রমেশ সাংবাদিকদের জানান, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল(TMC) ইন্ডিয়া(INDIA) জোটের অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ। মমতাজি অনেক বড় নেত্রী, অনেক সম্মানীয় রাজনীতিক। ওর থেকে প্রেরণা পাই আমরা। আমি জানি, সনিয়া গান্ধীজি, মল্লিকার্জুন খাড়গেজি, রাহুলজি ওঁকে খুব ভালবাসেন, সম্মান করেন। মমতাজিকে ছাড়া ইন্ডিয়া জোটের কল্পনাই করা যায় না। কখনও কখনও মতবিরোধ হয়। আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান বেরোবে। মমতাজি জানিয়েছেন, বিজেপি-কে হারানোই আমার লক্ষ্য, বিজেপি-কে হারিয়েই ছাড়বেন। এটা অনেক লম্বা পথ। চলার পথে মাঝে মধ্যে স্পিড ব্রেকার আসে, লাল আলো আসে। সেখানে আমরা কিছুক্ষণ থমকে যাই, তবে একেবারে থেমে যাই না। স্পিডব্রেকার টপকে যাই, লাল আলো এক সময় সবুজ হয়। এটাও সেই রকমই একটা ঘটনা। মমতাজি ছাড়া আমরা ইন্ডিয়া জোটের কথা কল্পনাও করতে পারি না। ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা বাংলাতেও জোট বেঁধেই লড়াই করবে। আলোচনা চলছে। শিগগিরই আসন ভাগাভাগির রফাসূত্র বের হবে। সেই ভাবনা নিয়েই কাল কোচবিহারে ঢুকছি আমরা।’
এদিন থেকেই রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সূত্রে জানা যায়, মমতার ক্ষোভ দেখে আর ঝুঁকি নিতে রাজী হননি সোনিয়া গান্ধি। মমতার সুরে সুর মিলিয়ে আম আদমি পার্টিও জানিয়ে দিয়েছিল পঞ্জাবে তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও জোট করছে না। এতেই পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস। বাংলায় রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা নিয়ে মমতা প্রকাশ্যে কোনও বিরোধিতা করেননি। কিন্তু তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে তিনি অসন্তোষ জানিয়েছেন দলের অন্দরে ঘনিষ্ঠজনদের কাছে। যে রাজ্যে কংগ্রেসের ১জন বিধায়কও নেই, সেখানে কংগ্রেস কীভাবে জোটের নামে ১০টা-১২টা আসন চাইছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা যেভাবে তৃণমূল এবং তাঁর সম্পর্কে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন তা কার্যত বিজেপিরই সুবিধা করে দিচ্ছে। এর পরে রাহুল বাংলায় ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা করলে তাতে বিজেপিরই সুবিধা হবে। ইন্ডিয়া জোট গঠনের প্রথম শর্তই ছিল যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী তাঁরাই সেই রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে ঘুঁটি সাজাবে। বাংলায় তৃণমূল লড়াই করছে বিজেপির বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্বই নেই। অথচ প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা বিজেপির দালালি করে চলেছেন। সেক্ষেত্রে তৃণমূলকে না জানিয়ে রাহুল কীভাবেই বা বাংলায় ন্যায় যাত্রা করে?
কার্যত মমতার এই ক্ষোভের কথা সোনিয়া গান্ধির কানে যেতেই তিনি এদিন তড়িঘড়ি করে রাহুলকে দিল্লি ফেরত আসার কথা বলেন। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের দাবি আগামী ২৭ জানুয়ারি আবারও বাংলায় আসছেন রাহুল। যদিও কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের সঙ্গে আসনরফার বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত রাহুল আর বাংলায় সম্ভবত পা রাখবেন না। মমতার কাছে কংগ্রেস বহরমপুর আর দক্ষিণ মালদা সহ রায়গঞ্জ আসন চাইবে। মমতা যদি এই ৩টি আসন দেন তো ভাল। নাহলে কংগ্রেস সম্ভবত এই রাজ্যে ২৪’র ভোট যুদ্ধে কোনও প্রার্থীই দেবে না। সেক্ষেত্রে প্রদেশ কংগ্রেসের বিজেপি ও বাম বান্ধব নেতাদের নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াই করতে হবে বা ‘বিকল্প রাজনীতি’র সন্ধান করতে হবে। তবে এটা মোটামুটি পরিষ্কার মমতাকে চটিয়ে কংগ্রেস বাংলায় কিছু আর করবে না। অন্তত ২৪’র ভোটের আগে পর্যন্ত।