নিজস্ব প্রতিনিধি: হাওড়া, হুগলি-সহ দক্ষিণবঙ্গের(South Bengal) ৫টি জেলায় বিশ্বব্যাঙ্কের(World Bank) দেওয়া ৩ হাজার কোটি টাকায় সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ফের ১ হাজার কোটি টাকা চেয়ে বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে লিখিত আবেদন করেছে রাজ্যের সেচ দফতর(West Bengal State Irrigation Department)। তাদের দাবি, এই টাকা পাওয়া গেলে রূপনারায়ণ(Rupnarayan) এবং দ্বারকেশ্বর(Darakeshwar) নদ সংস্কার করা হবে। তাতে হাওড়া ও হুগলি থেকে বন্যা চিরতরে নির্মূল তো হবেই, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমা এলাকার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতিও হবে। তার সঙ্গে সেখানে গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য জলসঙ্কটও অনেকটা মিটবে। বর্তমানে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় প্রথম পর্যায়ের কাজ চলছে। শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালে। একইসঙ্গে গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য ঘাটাল মহকুমার ব্যাপক জলসঙ্কট অনেকটাই মিটবে।
গত মাসের গোড়ায় নিম্নচাপের বৃষ্টি এবং DVC’র ছাড়া জলে প্লাবিত হয়েছিল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ব্লকের ৫টি, আমতা-২ ব্লকের ৫টি এবং হুগলির খানাকুলের ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। তবে কোথাও বাঁধ ভাঙেনি। বাঁধ উপচে জল ঢুকেছিল। রূপনারায়ণ ভরা থাকায় সেই জল সহজে নামেনি। DVC’র ছাড়া জলের একটি অংশ দামোদর হয়ে এসে আমতা-২ ব্লকের থলিয়ায় দামোদর থেকে কাটা খালের মাধ্যমে বাগনানের বাকসিতে রূপনারায়ণে পড়ে। DVC’র ছাড়া জলের আরও একটি অংশ মুণ্ডেশ্বরী হয়ে বাগনান-১ ব্লকেরই মানকুরে এসে রূপনারায়ণে পড়ে। এত জলের চাপ রূপনারায়ণ নিতে পারে না। ফলে আমতা-২ ব্লকের ‘দ্বীপ এলাকা’ বলে পরিচিত ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং ভাটোরা— এই দুই পঞ্চায়েত প্লাবিত হয়। কারণ, এই দুই পঞ্চায়েত এলাকা মুণ্ডেশ্বরী ও রূপনারায়ণে ঘেরা। সেখানে কোনও নদীবাঁধ নেই। জল বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে জমিতে ধস নামে। প্রচুর কৃষিজমি নষ্ট হয়। শুধু তাই নয়, রূপনারায়ণের জল বেড়ে গেলে বাগনান ১ ও ২ ব্লকের কিছু এলাকাতেও বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে বিশ্বব্যাঙ্কের টাকাতে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হলে।
গত ১২ অক্টোবর রাজ্য সেচ দফতরের কর্তারা আমতায় আসেন। DVC ১ লক্ষ ৪০ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার পরবর্তী পরিস্থিতি তাঁরা খতিয়ে দেখেন। সে সময়েই আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল তাঁদের কাছে ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং ভাটোরা পঞ্চায়েতের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে যে ৩ হাজার কোটি টাকার কাজ হচ্ছে, সেই প্রকল্পে হাওড়া-হুগলির কিছু এলাকা বাদ পড়েছে। বাদ পড়া এলাকার মধ্যেই আছে ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান ও ভাটোরা। সেই কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ে রূপনারায়ণ ও দ্বারকেশ্বর সংস্কারের জন্য আরও ১ হাজার কোটি টাকা চেয়ে কেন্দ্রের মাধ্যমে বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। সেচ দফতর সূত্রে খবর, দ্বারকেশ্বরের জলে ভাসতে হয় আরামবাগ শহর এবং সংলগ্ন ১৫টি পঞ্চায়েত এলাকাকে। তাদের প্রস্তাব অনুমোদিত হলে হাওড়া-হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা উপকৃত হবে। সমস্যা কমবে ঘাটাল-দাসপুরেরও।
হুগলির খানাকুল-২ ব্লকের শেষ প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া রূপনারায়ণে দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী এবং দ্বারকেশ্বরের জল পড়ে। এ ছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুরের দিক থেকে আসা শিলাবতী নদীরও জল মেশে। ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতির সঙ্গে রূপনারায়ণের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানে শিলাবতী ও কংসাবতী নদীর সংস্কারের কথা রয়েছে। কারণ, এই দুই নদীর জলও রূপনারায়ণে গিয়ে পড়ে। তাই সংস্কার হলে রূপনারায়ণের জলধারণ ক্ষমতা বাড়বে। ফল, বর্ষার মরসুমে ফুলেফেঁপে থাকা শিলাবতী এবং কংসাবতী নদী ছাড়াও সব খালের জল সহজেই রূপনারায়ণে গিয়ে মিশতে পারবে। ঘাটালে বন্যা হলেও বেশি দিন জল স্থায়ী হবে না। একই ভাবে কংসাবতীর নদীর চাপ কমবে। ফলে দাসপুরও উপকৃত হবে। এ ছাড়া, গ্রীষ্মকালীন চাষের (আনাজ ও ধান) জন্য ঘাটাল-দাসপুরে ব্যাপক জলসঙ্কট অনেকটাই মিটবে। কারণ, রূপনারায়ণ সংস্কার হলে জোয়ারের সময়ে বিশাল জলরাশি শিলাবতী-কংসাবতী নদীতে ঢুকবে। সেই জল ধরে রেখে গ্রীষ্মকালে জলসঙ্কট কাটানো সম্ভব।