কৌশিক দে সরকার: দেশের সরকারের হাত ধরে পুরস্কৃত বাংলার সরকারি কর্মসূচি। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার শনিবার ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’(Digital India) পুরস্কারের ‘পাবলিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মস-সেন্ট্রাল মিনিস্ট্রিজ, ডিপার্টমেন্টস অ্যান্ড স্টেটস’ শীর্ষক বিভাগে প্ল্যাটিনাম পুরষ্কার দিয়েছে বাংলায় ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকারকে। দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে ডিজিটাল ইন্ডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২২-এর মঞ্চে পুরস্কার নিলেন বাংলার অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। রাজ্য সরকারের নিজস্ব কর্মসূচি দুয়ারে সরকারের(Duyare Sarkar) জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বাংলার এই পুরস্কার পাওয়া নিয়েই এখন তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বিজেপির নীচুতলার নেতা থেকে কর্মীদের মধ্যে। কার্যত তাঁরা জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত ভোটের আগে বসে যাওয়ার হুমকি দেওয়া শুরু করেছেন। পরিস্থিতি যে ঘোরালো হয়ে উঠছে সেটা বুঝতে পেরে বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) তরফে থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এই নিয়ে বার্তা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন রাষ্ট্রপতির হাতে পুরস্কৃত বাংলার ‘দুয়ারে সরকার’
‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ পুরস্কার প্রদানের আয়োজন করে কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক। কার্যত মোদি সরকারের হাত ধরেই এই পুরস্কার প্রদানের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ পুরস্কারের ‘পাবলিক প্ল্যাটফর্ম’ বিভাগে প্ল্যাটিনাম পুরস্কার পেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। দেশের ৮০০টি প্রকল্পের মধ্যে সেরা প্রকল্প হিসাবে বিবেচিত হয়েছে এটি। যদিও কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে গ গত বছরই একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই পুরস্কারের ঘোষণা করেছিল মোদি সরকার। আর বাংলার বিজেপির নেতা থেকে কর্মীদের ক্ষোভ সেখানেই। যে দলের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই চালাতে হচ্ছে বিজেপির নীচুতলার নেতা থেকে কর্মীদের, মার খেতে হচ্ছে, খুন হতে হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসতে হচ্ছে, জেলে যেতে হচ্ছে শ্লীলতাহানি থেকে গণধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে, সেই দলের সরকারি কর্মসূচিকে কেন পুরস্কার দিচ্ছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকার। এখানে দলের কর্মীরা পড়ে পড়ে মার খাবে আর দিল্লিতে দল তৃণমূলকে পুরস্কার দেবে এটা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়! বাংলায় কুস্তি আর দিল্লিতে দোস্তি! এভাবে চলতে থাকলে বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে হাজারো লড়াই করেও কোনও লাভ হবে না। মানুষের কাছে কার্যত ভুল বার্তা যাচ্ছে বলে দাবি দলের নীচুতলার নেতা থেকে কর্মীরা।
আরও পড়ুন তৃণমূল বিধায়কের সঙ্গে ছবি তুলে শোকজের মুখে বিজেপি নেতা
দলের নীচুতলার নেতা থেকে কর্মীদের এই ক্ষোভের আঁচ পেয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বার্তা পাঠাতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। অন্তত সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বঙ্গ বিজেপির বার্তাকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আদৌ গুরুত্ব দেবে কিনা তা নিয়ে। কিছুদিন আগেই বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের পরিকল্পনা ছিল বাংলায় এখন থেকেই মোদি-শাহ আর নাড্ডাকে নিয়ে এসে প্রচারে ঝড় তুলতে যাতে পঞ্চায়েত নির্বাচন ও লোকসভা নির্বাচনে ফায়দা তোলা যায়। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস। সঙ্ঘের আপত্তিতে আপাতত বাংলায় কোনও রাজনৈতিক বা দলগত কাজে আসছেন না মোদি-শাহ আর নাড্ডা। আর সঙ্ঘের এই আপত্তির মূলেই ছিল ২০২৪ এর কথা মাথায় রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সুসম্পর্ক বজায় রাখার হিসাবটি। তাই বাংলাকে বা বাংলার সরকারি কর্মসূচিকে পুরষ্কৃত করা নিয়ে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে যে বার্তাই দিন না কেন তা যে গৃহীত হবে এমন সম্ভাবনা মোটেও দেখা যাচ্ছে না। অগত্যা আগামী দিনেও বাংলা দিল্লির দরবারে কদর পাবে, আর বাংলায় বিজেপির কর্মীরা পড়ে পড়ে মার খাবেন।