সুস্মিতা ঘোষ: বাংলার এদিক-ওদিক চোখ রাখলে সন্ধান মিলবে প্রচুর বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজোর ইতিহাস। আর বনেদি পুজো মানেই বাংলার ঐতিহ্যকে প্রেজেন্ট করা। তবে এক একটুও বনেদি বাড়ির পুজো মানেই একেক রকম বিশেষত্ব। যদিও বর্তমানে নতুন নতুন থিমের ভিড়ে ঢাকা পড়ছে বনেদি বাড়ির পুজোগুলি। কিন্তু প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে বনেদি বাড়ির পুজোগুলি সর্বদা মানুষের হৃদয়ের এক কোণায় থেকে যাবে। আর পুজোর দিনগুলিতে বনেদি বাড়ির পুজোগুলিতে যেন আলাদাই ব্যস্ততা, উন্মাদনা চোখে পড়ে। সকাল হলেই পুজোর ব্যস্ততা, এক চালার ঠাকুর, মায়ের জন্যে ভোগ রাঁধা, সকাল-সন্ধ্যায় আরতি, ঢাকের আওয়াজ, সবটাই বাংলার ঐতিহ্য। সব মিলিয়ে যেকোনো পাড়ার বনেদি পুজো যেন সেই পাড়াকেও আলোকিত করে। এমনই এক ঐতিহ্যশালী পুজোর নিদর্শন পাওয়া যায় ছাতাপাড়া বাঁড়ুজ্যে বাড়ির পুজো।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আগরপাড়ার ইলিয়াস রোডের এই পুজো চলে আসছে গত ১১৯৯ সাল থেকে। আর কয়েকশো বছর ধরে এই পুজোকে ধরে রেখেছেন ব্যানার্জি পরিবার। প্রায় এই পুজো সতেরো পুরুষ ধরে চলছে। এমনকি এই পাড়াতেও এই পুজোর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। তবে এই পুজোর মূল আকর্ষণ কী জানেন, ঘুটি-বাঙালের মিশেল। আর পূর্ব পুরুষ ঢাকা মানুষ ছিলেন বলে এই বাড়ির দুর্গা ঠাকুর বিসর্জনে যান বাড়ির পান্তা খেয়ে। পুজো করা হয় একেবারে বাড়ির মেয়ে রূপে। এছাড়া মায়ের পুজোতে একটি বিশেষ রীতিও রয়েছে। এই বাড়ির মা যান বাড়ির সদস্যদের কাঁধে চেপে, এরপরও গঙ্গাবক্ষে দুই নৌকা করে মাকে নিরঞ্জনের পথে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে বর্তমানে এই রীতি নানা কারণে বাদ পড়েছে। তবে আজও কাঁধে চেপে বাড়ির মেয়ে রূপে থাকা মা দুর্গা বিসর্জন যান। এই রীতিও এখন বর্তমান। পুজোর এই কটাদিন বাড়ির পুরুষদের পরনে থাকে ধুতি, গেঞ্জি, এবং কোমরে বাঁধা থাকে গামছা। মহিষ বলিও দেওয়া হতো। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহুদিন হল বন্ধ হয়েছে এই রীতি। দশমীর দিন চলে বাড়ির মেয়ে বৌদের সুন্দর খেলা। তাও দেখার মত হয়। তবে এখন এই পুজো সামলাচ্ছেন এই বাড়ির নতুন প্রজন্ম।