নিজস্ব প্রতিনিধি: কে বলেছে শুধু হিন্দুদের আরাধ্য দেবী দুর্গা? আক্ষরিক অর্থেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো (DURGA PUJA)। কোদাখাকির দুর্গাপুজোর নিয়ম, দেবীকে প্রথম ভোগ নিবেদন করবে মুসলিম পরিবার। তারপরে অন্যান্যরা। এমনই রীতি বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কার রঘুনাথগঞ্জ- ২ ব্লকের জোতকমল গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীজনার্দনপুরের বহুরা গ্রামের ব্যানার্জী পরিবারে।
ইতিহাসের হাত ধরে ঐতিহ্যের এই পুজো এবারে ৩৬১ বছরে পদার্পণ করল। ব্যানার্জী পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল সাগরদিঘির মণিগ্রামে। সেখান থেকে বহুরা চলে এসেছিলেন শরৎচন্দ্র ব্যানার্জী। তিনিই হয়েছিলেন জোতকমল এলাকার জমিদার। পুজোর ইতিহাস নিয়ে কথিত আছে, গিরিয়া- সেকেন্দ্রার বনে দেবী দুর্গার আরাধনা করত ডাকাত দল। একদিন জমিদারির কাজ সেরে ফেরার পথে শরৎচন্দ্র দেখতে পেয়েছিলেন, ডাকাতদের সেই দুর্গা বিগ্রহ। এরপরে রাতে জমিদার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন দেবীর। দেবীর আদেশ ছিল, জমিদার বাড়িতে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করার। তারপরে শরৎচন্দ্র বিগ্রহকে জঙ্গল থেকে নিয়ে এসে বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করে শুরু করেছিলেন আরাধনা।
কথিত আছে, আবার একদিন স্বপ্নাদেশ পান জমিদার। নির্দেশ, দেবীকে যেন প্রথম ভোগ নিবেদন করে কোনও মুসলিম পরিবার। জমিদারি এলাকার ভেতরে বহুরা গ্রামে থাকতেন ‘লোকার মা’ নামে পরিচিত এক মুসলিম বিধবা নারী। তাঁকে জমিদারবাড়ির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়, দেবীকে ভোগ নিবেদন করার জন্য। তবে অতি দরিদ্র সেই মহিলা বলেছিলেন, নিজের খাবারই জোটে না তাঁর। তাই ভোগ নিবেদন করা সম্ভব নয়। জনশ্রুতি, সেই মহিলা পরে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন দেবীর। তারপরে জঙ্গল থেকে কোদার চাল কুড়িয়ে এনে তা থেকে নাড়ু তৈরি করে দেবীকে ভোগ নিবেদন করেছিলেন। তাই এখানে দেবী দুর্গা ‘কোদাখাকি’।
সেই রীতি মেনেই আজও মুসলিম পরিবার প্রথম ভোগ নিবেদন করে দেবীকে। আজও এখানে অন্যতম ভোগ কোদার চালের নাড়ু। এখানে রেওয়াজ নেই আরতি ও পুষ্পাঞ্জলির। পুজোয় আসতে পারেন সকল ধর্মের মানুষ।