নিজস্ব প্রতিনিধি: ১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিবস। দিনটি পালিত হয় যুব দিবস হিসেবে। আজকের দিনটি অন্য কারণেও স্মরণীয়। এই দিনে শহিদ হয়েছিলেন দেশমাতার বীরপুত্র মাস্টারদা সূর্য সেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন ও অম্বিকা চক্রবর্তী চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘সাম্য আশ্রম’। সেখানে গোপনে চলত বিপ্লবীদের আখড়া। ‘যুগান্তর’ দলের অন্যতম সহযোগী ছিল এই সংগঠন। ১৯২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর টাইগার পাস মোড়ে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের কর্মীদের বেতন সহ ১৭০০ টাকা লুঠ করে সূর্য সেনের দলের সদস্যরা। বেশ কছুদিন পরে ব্রিটিশ পুলিশ হানা দেয় তাঁদের গোপন আখড়ায়। বাধে বিপ্লবী এবং ব্রিটিশ পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ- ‘নাগরকাটা পাহাড় খণ্ডযুদ্ধ’। একাধিক বিপ্লবী কার্যকলাপ চালানোর জন্য কলকাতার ওয়েলিংটন স্ট্রিট থেকে গ্রেফতার করা হয় সূর্য সেনকে। দিনটা ছিল ১৯২৬ সালের ৮ অক্টোবর। এরপরে ধাপে ধাপে বন্দি ছিলেন মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল, বম্বে রত্নগিরি জেল এবং বেলগাঁও জেলে। ছাড়া পেয়েছিলেন ১৯২৮ সালে।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল রাতে বিপ্লবীরা রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে মালবাহী ট্রেন উল্টে দেয়। টেলিফোন এবং টেলিগ্রাম অফিস দখল করে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে পেট্রোল ফেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। লুঠ করা হয় চট্টগ্রাম রেলওয়ে অস্ত্রাগার। দখল করা হয় দামপাড়া পুলিশ রিজার্ভ ব্যারাক। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সূর্য সেন গঠন করেন বিপ্লবী সরকার। ৪ দিন স্থায়িত্ব ছিল এই সরকারের। এরপর ২২ এপ্রিল ইংরেজ সেন্যবাহিনী জালালাবাদ পাহাড়ে ঘিরে ফেলে বিপ্লবীদের। বাধে সংঘর্ষ। ১৯৩২ সালের ১৩ জুন ব্রিটিশ পুলিশ সূর্য সেনকে ধরতে এলে ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন ক্যামেরনকে গুলি করেন সূর্য সেন, কল্পনা দত্ত এবং প্রীতিলতা ওয়েদ্দেদার।
১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাস্টারদার (SURYA SEN) নির্দেশে ইউরোপীয় ক্লাবে আক্রমণ চালান প্রীতিলতা। তবে ব্রিটিশদের গুলিতে আহত হন তিনি। এরপরে পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন দেশমাতার বীরকন্যা।
১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নেত্র সেন ব্রিটিশ পুলিশের চরবৃত্তি করে ধরিয়ে দেয় সূর্য সেনকে। তাঁর গ্রেফতার হওয়ার আগে বিপ্লবীদের সঙ্গে ব্রিটিশ পুলিশের ব্যাপক গুলির লড়াই হয়েছিল। বেশ কয়েকবার মাস্টারদাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করলেও বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন বিপ্লবীরা।
১৯৩৩ সালের ১৪ অগাস্ট ট্রাইব্যুনাল কোর্ট রায় দেয়, মাস্টারদার প্রাণদণ্ডের। এরপরে বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে আপিল করা হয়। তবে ট্রাইবুনালের রায় বহাল রাখে হাইকোর্ট। দিনটা ১৯৩৩ সালের ১৪ নভেম্বর। কারাগারে বন্দি অবস্থায় ব্রিটিশ পুলিশরা অকথ্য অত্যাচার চালায় মাস্টারদা’র ওপরে। দাঁত, নখ উপড়ে নেওয়া হয়। ভাঙা হয় হাড়। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি ভারতমাতার বীরপুত্রের ফাঁসি দেওয়া হয়। শহিদ হন মাস্টারদা। তাঁর সঙ্গে শহিদ হন বীর বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার। বিপ্লবীদের দেহ তাঁদের পরিবারের হাতেও দেয়নি অত্যাচারী ব্রিটিশরা। দেহ ফেলা হয়েছিল সমুদ্রে।