নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলায়(Bengal) পঞ্চায়েত নির্বাচনে(Panchayat Election) পদ্মশিবিরের ভরাডুবি হতেই সেই হারের দায় আর নিজেদের কাঁধে নিতে চাইছেন না দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার(Sukanta Majumdar) ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। পরিবর্তে তাঁরা সেই হারের দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন দলেরই মণ্ডল সভাপতিদের ঘাড়ে। সুকান্ত-শুভেন্দু শিবিরের দাবি, এই সব মণ্ডল সভাপতিরা নাকি গোপনে তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া করিয়ে ভোট করিয়েছেন। তাই বিজেপি হেরেছে আর তৃণমূল জিতেছে। লক্ষ্যণীয় ভাবে এই অভিযোগে যে সব মণ্ডল সভাপতিকে বিদ্ধ করা হয়েছে তাঁরা সবই দলের আদি নেতা থেকে কর্মী। অনেকেই আবার সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ। আর তা৬দের ঘাড়ে এই বদনাম চাপিয়েই ক্ষান্ত হননি সুকান্ত-শুভেন্দুরা। তাঁরা এবার এই সব মণ্ডল সভাপতিদেরও নিজ নিজ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন। চলতি মাসেই রাজ্যে বিজেপির(BJP) ৮০০জন মণ্ডল সভাপতিকে অপসারিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তার প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন হকারদের পাশে মমতা, ৩ দফায় মিলবে ৮০ হাজার টাকা
শুধু বাংলাই নয়, গোটা দেশে প্রতিটি রাজ্যে নিচুতলায় বিজেপির সংগঠনের মূল ভিতই হল ‘মণ্ডল’ স্তর। রাজ্য নেতাদের মতো ঠান্ডা ঘরে বসে কিংবা সংবাদমাধ্যমে মুখ দেখানো নয়, রীতিমতো রাজনৈতিক লড়াই করে পদ্ম শিবিরের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর এই মণ্ডলস্তরের নেতা ও কর্মীরা। কিন্তু নিজেদের চেয়ার বাঁচাতে বঙ্গ বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এখন এতটাই মরিয়া যে, তাঁরা কার্যত বলির পাঁঠা বানিয়ে দিয়েছেন এই মণ্ডল সভাপতিদেরই। গোটা রাজ্যে বিজেপির ১৩০৭টি মণ্ডল রয়েছে এখন। তার মধ্যে ৮০০ মণ্ডল সভাপতিকে বদল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুকান্ত-শুভেন্দু। শুধু সিদ্ধান্ত নেওয়াই নয়, ইতিমধ্যে ৩৯০ জন মণ্ডল সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়াও হয়েছে। বিজেপিতে সাংগঠনিকভাবে রাজ্য ও জেলাস্তরের পরেই মণ্ডল। এক একটি পুরসভায় ২ থেকে ৩টি কোথাও আবার ১৪টি পর্যন্ত মণ্ডল থাকে। গ্রামে জেলা পরিষদভিত্তিক একটি করে মণ্ডল গঠিত হয়। সেই হিসাবেই বাংলায় এখন বিজেপির ১৩০৭টি মণ্ডল রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি মণ্ডলের শীর্ষ নেতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এই নিয়ে যাতে ক্ষোভ না ছড়ায় তার জন্য এই সব পদ হারা নেতাদের বর্ধিত জেলা কমিটি গড়ে পুনর্বাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও তাতে সব ক্ষোভ চাপা দেওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন ‘খেলা হবে’ প্রকল্পের জন্য নাম নথিভুক্ত হবে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচীতে
বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের এহেন সিদ্ধান্তে যারপরনাই ক্ষুব্ধ দলের একটা বড় অংশ। বিশেষ করে দলের আদি নেতা ও কর্মীরা। তাঁদের দাবি, শুভেন্দুর লোকদের জায়গা করে দিতে আর সুকান্তের অনুগামীদের পদ দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে হারের জন্য বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে ‘সন্ত্রাস’র কারণ তুলে ধরলেও তা ধোপে টেকেনি। কেননা আসন ও ভোট দুই বেড়েছে বাম ও কংগ্রেসের। একই সঙ্গে এটাও প্রমাণিত, বিজেপির ভোট কমছে। অগত্যা নিজেদের গদি বাঁচাতে এখন সুকান্ত শুভেন্দুরা দলেরই মণ্ডল সভাপতিদের টার্গেট করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পদ হারা নেতাদের। সব থেকে বড় কথা, এই সিদ্ধান্তের জেরে এখন পাল্টা প্রশ্নও উঠে গিয়েছে। যে ভাবে মণ্ডল সভাপতিদের সরানোর কারণ হিসাবে তৃণমূলের সঙ্গে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব তুলে ধরা হচ্ছে তার জেরে এখন প্রশ্ন, যারা দলকে হারাতে তৃণমূলের হাত ধরেছিলেন তাঁদের শাস্তি না দিয়ে কেন দলেরই জেলা কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হচ্ছে? এখন দেখার বিষয় এতকিছু করেও সুকান্ত-শুভেন্দুরা কতদিন নিজেদের পদ আঁকড়ে ধরে রাখতে পারেন!