নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে চুরি গিয়েছিল প্রচুর সোনার গয়না ও টাকা। তার জেরে সেই পরিবারের তরফে মোট ৭জনের নামে থানায় দায়ের হয়েছিল অভিযোগ। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় প্রতিবেশী যুবককে। বলা হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেননা অভিযোগ পত্রে তাঁর নাম রয়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের পরে না তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়, না তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এমনকি আদালতেও তোলা হয়নি। ২দিন বাদে তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় থানার লকআপেই। আর তার পরে পরেই ওই যুবকের পরিবারের দাবি, লকআপে ওই যুবককে পিটিয়ে মেরে(Lockup Death) দিয়েছে পুলিশ। আর সেই অভিযোগকে ঘিরে শুক্রবার রাতে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ(Murshidabad) জেলার নবগ্রাম(Nabagram) থানা চত্বর। ক্ষিপ্ত জনতার বিক্ষোভে হটাতে লাঠিচার্জের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের সেলও ফাটানো হয়। এমনকি উত্তেজিত জনতাকে আটকাতে থানার গেটের সামনে কাঁচ ভেঙে ছড়িয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার হুমায়ুন কবীরের, যোগাযোগ বিজেপি’র সঙ্গে
জানা গিয়েছে, নবগ্রাম থানার সিঙ্গার গ্রামে বাড়ি বছর ৩৫’র গোবিন্দ ঘোষের(Gobinda Ghosh)। তিনি নবগ্রাম সেনা ছাউনিতে দিন মজুরের কাজ করতেন। বাড়িতে আছে বাবা-মা ও এক বোন। গত মঙ্গলবার গোবিন্দের এক প্রতিবেশীর বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। সেই পরিবারের তরফে ওই ঘটনায় পুলিশের কাছে গোবিন্দ সহ ৭জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ, পুলিশ সেই ঘটনার তদন্তে নেমে বাকি ৬জনকে না ডেকেও বাড়ি থেকে বুধবার বিকালে গোবিন্দকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের পরও তাঁকে ছাড়া হয়নি। বৃহস্পতিবার থানায় গিয়েছিল গোবিন্দের পরিবার। সেখানে তাঁরা পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কেন গোবিন্দকে ছাড়া হয়নি? তার উত্তরে পুলিশ নাকি তাঁদের জানিয়েছিল, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তাঁকে ছাড়া হয়নি। এরপর শুক্রবার বিকালে থানা থেকে ফোন করে গোবিন্দের পরিবারকে জানানো হয় লকআপেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে গোবিন্দের।
আরও পড়ুন Trial Run-এই প্রশ্নের মুখে হাওড়া পাটনা Vande Bharat Express
এরপরে শুক্রবার রাতেই এই ঘটনাকে ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা চেহারা নেয় নবগ্রাম থানা চত্বর। গোবিন্দর মৃত্যুর খবর পেয়ে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁর পরিবারের সদস্য ও গ্রামের প্রায় ৩০০ মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। উত্তেজিত জনতা থানার গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করলে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা হয়। বিক্ষোভকারীদের আরও অভিযোগ, পুলিশ কাঁচের বোতল ভেঙে থানার গেটের সামনে ছড়িয়ে দেয়, যাতে তাঁরা ভিতরে ঢুকতে না পারেন। গোবিন্দের পরিবারের অভিযোগ, চুরির ঘটনার দিন গোবিন্দ সেনা ছাউনিতে ছিল। সে এই চুরির ঘটনায় মোটেও জড়িত নয়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে ৩দিন ধরে লকআপে আটকে রেখে তাঁকে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে দিয়েছে। গোবিন্দের বাবার দাবি, ‘ছেলে আমার মিলিটারি ক্যাম্পে কাজ করে। সেদিনও কাজ করতে গিয়েছিল ছেলে। আজ ছাড়ার কথা। কিন্তু মারতে মারতে পুলিশ মেরেই দিয়েছে। ওসিই পিটিয়ে মেরে দিয়েছে।’