নিজস্ব প্রতিনিধি: চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় একই সময়ে নদিয়ার রানাঘাট এবং পুরুলিয়া শহরে একই সংস্থার গয়নার শোরুমে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। তারমধ্যে রানাঘাটে বিহার থেকে আসা ওই ডাকাতদলকে তাড়া করেছিলেন রানাঘাট থানার(Ranaghat PS) ASI রতন রায়(Ratan Roy)। প্রায় ৫০০ মিটার ধাওয়া করে চার সশস্ত্র ডাকাতের দিকে গুলি করে ২ ডাকাতকে ঘায়েল করার পাশাপাশি আটক করেন কোটি টাকার লুটের গয়না-সহ নগদ টাকা এবং মোটরবাইক। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় ওই ঘটনায় জড়িয়ে থাকা আরও ৩ ডাকাত। ডাকাতদলকে ধরাশায়ী করে যে সাহসিকতার পরিচয় সেদিন দিয়েছিলেন রতনবাবু, সেই সাহসিকতার জন্য এদিন পুলিশ দিবসে(Police Day) তাঁকে সংবর্ধিত(Felicitated) করল রানাঘাট পুলিশ জেলা কর্তৃপক্ষ(Ranaghat Police District Authority)।
ব্যারাকপুর সেন্টারের ১৯৯৬ ব্যাচের কনস্টেবল থেকে কয়েক মাস আগেই ASI পদে উন্নিত হন রতন রায়। কিন্তু সেই পদোন্নতির পরেও তাঁকে নিত্যদিন সহকর্মীদের ঠাট্টা-তামাশার শিকার হতে হয়েছে। কেননা মানুষটি স্থূলকায়। ওজন ১০২ কেজি। গড়পড়তা শারীরিক উচ্চতায় এই অতিকায় শারীরিক গঠন নিয়ে পুলিশের মতো কাজে তিনি কী করে দেখাতে পারবেন সেটাই ঠাট্টা-তামাশার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু আসল ঘটনার সময় দেখা গিয়েছে, দিনেদুপুরে শহরের বুকে একটা গয়নার দোকানে ডাকাতির খবর পেয়ে গাড়ির চালক আর ৪জন লাঠিধারী পুলিশ নিয়েই তিনি ছুটে গিয়েছেন ঘটনাস্থলে। শুধু ছুটে গিয়েছেন তাই নয়, পুলিশের উর্দি ছাড়াই বন্দুক হাতে ধাওয়া করেছেন ডাকাতদলকে। একবারও ভাবেননি ডাকাতদের ছোঁড়া গুলিতে তিনি মারাও যেতে পারতেন। এটাই রতন রায়।
রতনবাবু এখন শুধু তাঁর পরিবারের ‘রত্ন’ নন। তিনি এখন রানাঘাটের ‘রত্ন’, পুলিশ পরিবারের ‘রত্ন’। এদিন তাঁকে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার কে কান্নান বেশ গর্বের সঙ্গে জানিয়েছেন, ‘আমাদের সহকর্মীর কাজে আমরা গর্বিত। আমাদের এক সহকর্মী পুলিশকে গর্বিত করেছে। তাই আজ ‘পুলিশ দিবস’-এ পুলিশ জেলার পক্ষ থেকে ওঁকে সংবর্ধিত করা হয়েছে। ওঁর এই কাজ অন্যান্য পুলিশ অফিসার এবং কর্মীকে উৎসাহিত করবে।’ সংবর্ধিত হয়ে অবশ্য বিগলিত নন রতন। মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগের ওই বাসিন্দা জানিয়েছেন, ‘আমি নিজের কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। তবে যে কোন পুরস্কার, সংবর্ধনা ভাল কাজ করতে উৎসাহিত করে, অনুপ্রেরণা দেয়। সম্মানিত হয়ে ভাল লাগছে।’