নিজস্ব প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ: শুধু তো এক রকমের দই নয়, বাহারী দই। নাম শুনলেই জিভে জল আসে। ক্ষীরসা দই, শাহী দই, টক দই, ডায়াবেটিক দই, শ্রীপুরী দই…। শনিবার বসন্ত পঞ্চমীর দিন আড়াই বছর ধরে চলে আসা রীতি মেনেই সিরাজগঞ্জের তাড়াশে শুরু হলো দই মেলা। আর দইয়ের লোভে দূর-দূরান্ত থেকে মেলায় ছুটে এসেছেন ভিন গাঁ, ভিন জেলার মানুষ। দই চেখে দেখে বাড়ির জন্যও কিনছেন হাঁড়ি-হাঁড়ি দই। তবে বগুড়ার শেরপুর, রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা, গুরুদাসপুরের শ্রীপুর, উল্লাপাড়ার ধরইল, চাটমোহরের হান্ডিয়াল ও তাড়াশের দই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
তাড়াশের দই মেলা নিয়ে রয়েছে নানা গল্প-গাঁথা। তাড়াশ উপজেলা পুজো উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপনকুমার গোস্বামী জানান, আড়াই বছর আগে তাড়াশের জমিদার ছিলেন বনোয়ারীলাল রায়। তিনি নিজে দই আর মিষ্টির পরম ভক্ত ছিলেন। বাড়িতে আসা অতিথিদেরও দই দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। এক বার বসন্ত পঞ্চমীতে অর্থাৎ সরস্বতী পুজোর দিন জমিদার বাড়ির সামনেই রসিক রায় মন্দিরের মাঠে তিনদিনব্যাপী দই মেলার আয়োজন করেছিলেন। আশেপাশের এলাকা থেকে সাপুকাররা তাঁদের তৈরি দইয়ের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। যতদিন জমিদার বনোয়ারীলাল বেঁচে ছিলেন ততদিন সেরা দই প্রস্তুতকারককে পুরস্কারও দিতেন। সেই থেকে প্রতি বছর সরস্বতী পুজোর দিন শ্রী পঞ্চমী তিথিতে তাড়াশে দই মেলা আয়োজিত হয়ে আসছে।
আড়াইশো বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা ঘিরে তাড়াশে সাজ-সাজ রব পড়ে গিয়েছে। দইয়ের পসরার পাশাপাশি মেলায় দেদার বিকোচ্ছে মুড়ি, মুড়কি, চিড়া, বাতাসা, কদমা, গুড়সহ নানা মেলায় দইয়ের পসরা সাজিয়ে বসা উজ্জ্বল ঘোষ, সুভাষ ঘোষরা জানালেন, সাম্প্রতিক সময়ে দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের দাম বাড়ার কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে একদিনের জন্য মেলা বসলেও চাহিদা থাকার কারণে কোনও দই অবিক্রিত থাকে না।