নিজস্ব প্রতিনিধি, হরিপুর: বহু অজানা ইতিহাসের নীরব সাক্ষী বহন করে দাঁড়িয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর রাজবাড়ি। এখনও দেশের বহু প্রান্ত থেকে পর্যটক ও গবেষকরা ছুটে আসেন ইতিহাস ছুঁয়ে দেখার প্রবল ইচ্ছা নিয়ে। স্থানীয় বিশিষ্টজন ও সাধারণ মানুষের দাবি, ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে রাজবাড়িটি সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হোক। সেই দাবি মেনে নেওয়ার কোনও ইচ্ছাই দেখাননি প্রশাসনিক আধিকারিকরা। ফলে প্রশাসনিক অবহেলা আর ঔদাসীন্যে সেই বহু অজানা ইতিহাসের হরিপুর রাজবাড়ি আজ ধ্বংসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে।
স্থানীয় গবেষকরা জানিয়েছেন, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৯৩ সালে তৎকালীন হরিপুরের জমিদার রাঘবেন্দ্র রায়চৌধুরীর উদ্যোগেই শুরু হয়েছিল রাজবাড়ি নির্মাণের কাজ। যদিও আকস্মিক মৃত্যুর কারণে বাড়ি নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেননি তিনি। তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করেন পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায়চৌধুরী। দ্বিতল বিশিষ্ট বাড়িটি পুরো লতাপাতার নকশায় ভরা। রয়েছে জগেন্দ্র নারায়ণের ১৪টি আবক্ষ মূর্তি। বাড়ির পূর্বপাশে একটি শিব মন্দির এবং মন্দিরের সামনে নাট মন্দির রয়েছে। এমনকী একটি বড় লাইব্রেরীও ছিল। সেই লাইব্রেরিতে বহু দুস্প্রাপ্য বইও ছিল। বাড়িতে প্রবেশের মুখেই ছিল সিংহ দরজা।
দেশভাগের পরে রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা পাততাড়ি গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরেই রাজবাড়ির দুঃসময়ের শুরু। পরিত্যক্ত হয়ে থাকা রাজবাড়িতে প্রথমে বেশ কিছু সরকারি অফিস ছিল। কিন্তু কালচক্রে সেই সব অফিস উঠে যাওয়ার পরেই অবৈধ দখলদারদের দাপট শুরু হয়। যে যার মরো রাজবাড়ির বিভিন্ন অংশের দখল নিতে শুরু করেন। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়ানো হরিপুর রাজবাড়ির হতশ্রী দশা দেখলে এমনিতেই মন খারাপ হয়ে যায়। দোতলার বেশ কয়েকটি ঘরে পায়রার খামার গড়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন কয়েকজন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক দখলদার এ বিষয়ে সাফাই দিয়েছেন, ‘বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে তাই ব্যবহার করছি’। বিনা অনুমতিতেই রাজবাড়ির একাংশ দখল করে কেবল ব্যবসা চালাচ্ছেন আর একজন। তাঁর কথায়, ‘কেউ কোনও আপত্তি করেনি। অনুমতি নেওয়ার কথাও বলেননি কেউ।’
কেন স্থানীয়রা বারবার দাবি জানানো সত্বেও হরিপুর রাজবাড়ি সংরক্ষণে এগিয়ে এলো না পুরাতত্ত্ব বিভাগ? দিনাজপুরের কাহারোলের দায়িত্বরত কান্তনগর প্রত্নতাত্বিক জাদুঘরের সহকারী কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। চলতি মাসের শেষ দিকে হরিপুর রাজবাড়ি পরিদর্শনে যাব। যদি রাজবাড়িটি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সংরক্ষণের তালিকাভুক্ত হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’