এই মুহূর্তে




গান শুনেই এই মা দক্ষিণ মুখী থেকে হয়ে গিয়েছিলেন পশ্চিম মুখী, কী এমন হয়েছিল ?




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায় : কালীক্ষেত্র কলকাতার কালীকথা বলতে গেলেই কালীসাধক রামপ্রসাদের একটা গানের লাইন মনে পড়ে, ” কালী নাম দাও রে বেড়া, ফসলে তছরুপ হবেনা”। তবে কলকাতার কালীকাহিনী শান্তিপুরের আগমেশ্বরী কালীর থেকে অনেকাংশে আলাদা বললেই চলে। বলা ভালো যে, তিলোত্তমা মহানগরীর অধিকাংশ প্রাচীন কালী বিভিন্ন নাম করা ডাকাতের সাথে যুক্ত। কারণ, বাংলার তৎকালীন ডাকাত সর্দাররা ছিলেন কালীভক্ত। জনশ্রুতি আছে, সেই সমস্ত ডাকাতেরা মায়ের পুজো করে ও নরবলি দিয়েই ডাকাতি করতে বেরোতো। কথিত আছে, বাংলার ডাকাতদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলেন চিত্তেশ্বর রায় ও রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় মতান্তরে রঘুনাথ ঘোষ; যাঁরা প্রধানত পরিচিত ছিলেন “চিতে ডাকাত” ও “রঘু ডাকাত” নামে।

কলকাতার চিতপুরে বহু শতাব্দী প্রাচীন দুটি মন্দির চিত্তেশ্বরী দুর্গা ও সর্বমঙ্গলা মন্দির। এই দুই প্রাচীন মন্দির বিশেষত এই দুই ডাকাতেরই প্রতিষ্টা করা। চিতে ডাকাত করেছিলেন চিত্তেশ্বরী দুর্গা মন্দির ও রঘু ডাকাত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সর্বমঙ্গলা কালীর। যদি ভুল না করি, প্রাচীন কালীক্ষেত্রের সীমানা ছিল এই চিৎপুর থেকে কালীঘাট হয়ে বেহালা পর্যন্ত নির্ধারিত। এমনকি ব্রিটিশদের পুরোনো মানচিত্রেও চিৎপুর থেকে কালীঘাট পর্যন্ত একটি মাত্র লম্বা রাস্তার কথা পাওয়া যায়। ম্যাপে উল্লেখিত নাম Old Pilgrimage Trail। এই পথ দিয়েই পুণ্যার্থীরা দুই তীর্থস্থান দর্শন করতেন । ঘন জঙ্গলে ঘেরা এই পথে ফড়ে, ঠগী, ডাকাতদের বেশ উপদ্রব ছিল। তবে দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী কালীবাড়ি এর অনেক পরে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।

জনশ্রুতি আছে, একদিন সন্ধ্যায় গঙ্গার চড়ে উত্তর দিকে রঘু ডাকাত ভ্রমণ করছিলেন। ভ্রমণকালে তিনি জলাময় অংশে এক স্থানে দুটি পাথরের মধ্যে একটি মহাদেব এবং আরেকটি দেবী মূর্তি দেখতে পান। সেই রাত্রে দেবী তাঁকে স্বপ্নে দর্শন দিয়েছিলেন। জানা যায়, রঘু ডাকাতের এই সর্বমঙ্গলা দেবী নির্মিত হয়েছিলেন নিমকাঠ দিয়ে। তাঁর বাহন সাদা সিংহ। দেবী রক্তবর্ণা। পুরোপুরি লাল না বলে লাল ও খয়েরির মিশ্রণ বলা যেতে পারে। বাঁ দিকের এক হাতে খড়গ, অন্য হাতে কমণ্ডলু, ডান দিকের দুই হাতে বরাভয় ও অভয় মুদ্রা। পায়ের নীচে মহিষাসুরের মুণ্ড। রঘু ডাকাত রক্তবস্ত্র না-পরে পট্টবস্ত্রে মায়ের পুজো করতেন। তিনি পরম বৈষ্ণব হলেও মায়ের পুজো করতেন শাক্ত মতে।

মন্দিরের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, দেবী সর্বমঙ্গলা ছিলেন দক্ষিণ মুখী। তবে, তিনি গান শুনে ঘুরে গেছিলেন পশ্চিমে। এই ঘটনার নেপথ্যে কী এমন কারণ আছে ? শোনা যায়, একবার কালীসাধক রামপ্রসাদ স্বয়ং পড়েছিলেন রঘু ডাকাতের খপ্পরে ৷ সেদিন ছিল ঘোর অমাবস্যা। প্রায় জনমানবহীন পথঘাট ৷ রঘু আর বুধো ডাকাত সকাল থেকেই চিন্তিত আজ মায়ের সামনে নরবলি দেওয়ার জন্য কেউই নেই। কোনও কারণে মায়ের সেবক রামপ্রসাদ ফিরছিলেন এই পথে। তিনি ধরা পড়লেন রঘু ডাকাতের দলবলের হাতে। তাঁকে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হল সর্দারের সামনে। রঘু ডাকাত বলল, ‘ওকে বেঁধে হাড়িকাটে ঢোকা।’ রামপ্রসাদ বললেন, ‘তোমাদের একটা অনুরোধ করি, আমাকে বলি দেওয়ার আগে মাকে একটা গান শোনাতে দাও।’ মাকে গান শোনানোর আবেদন মঞ্জুর হল। রামপ্রসাদ তাঁর উদাত্ত কণ্ঠে মায়ের উদ্দেশ্যে গান ধরলেন : ‘তিলেক দাঁড়া ওরে শমন বদন ভরে মাকে ডাকি,

আমার বিপদকালে ব্রহ্মময়ী,

আসেন কিনা আসেন দেখি,

লয়ে যাবি সঙ্গে করে;

তার এত ভাবনা কিরে…’

এ গান শুনে চোখে জল এসেছিল রঘু ডাকাতের ও তিনি দেখলেন, রামপ্রসাদের জায়গায় মা কালী স্বয়ং উপবিষ্ট। তখনি রামপ্রসাদের পায়ে ভক্তিতে লুটিয়ে পড়েন রঘু । বারবার ক্ষমা চেয়ে সম্মানের সঙ্গে মুক্তি দেয় রামপ্রসাদকে। সেই কার্ত্তিকী অমাবস্যার দিন থেকে নরবলি বন্ধ করে চালু হল পাঁঠাবলির নিয়ম।

লোকশ্রুতি আছে, তার বেশ কিছু কাল পরে, রামপ্রসাদ নৌকা করে কলকাতা থেকে হালিশহর যেতে যেতে সর্বমঙ্গলা দেবীকে গান শুনিয়েছিলেন, ‘মা তারিণী শঙ্কর বৈরাগী।’ খোলা গলায় তার গান ভেসে চলল মাতৃ মন্দিরের দিকে। কিংবদন্তি আছে, ভালো করে গান শুনতে সর্বমঙ্গলা দেবীর  দক্ষিণা মূর্তি বেদী সমেত পশ্চিম দিকে ঘুরে গিয়েছিল । সেই থেকে ব্রহ্মময়ী সর্বমঙ্গলা মা পশ্চিমমুখী। এমনকি, আজও এই মন্দির গেলে দক্ষিণ দিকেই মন্দিরের প্রধান দরজা লক্ষ্য করা যায়।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

রাজার নির্দেশে চাঁচলের ৩৫০ বছরের রীতি মেনে কালী প্রতিমা কাঁধে নিয়ে দৌড় ভক্তদের

মা সেজেছেন দশ হাত-পায়ে, বসিরহাটেই এবার উজ্জয়ণের মহাকালেশ্বর মন্দির

মা কালীকে বিসর্জন দিতে গিয়ে কালীর কোলে বিলীন হয়েছিলেন রামপ্রসাদ 

৪০০ বছর আগে ডাকাতদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই কালী পুজো

জানুন দক্ষিণেশ্বরে কালীপুজোর মহাভোগে কী থাকছে, রইল বিশেষ প্রণালী

ঘরে উপচে পড়বে ধন-সম্পদ, জেনে নিন দীপাবলিতে লক্ষীপুজোর সময়কাল এবং নিয়ম

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর