নিজস্ব প্রতিনিধি: সেই ভোলা ময়রা। কালীভক্ত ‘কবিয়াল’ অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’কে যিনি অপদস্থ করতে চাইতেন। যিনি নিজেকেই বড় কবিয়াল হিসেবে মনে করেছিলেন। পরে অবশ্য ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাও চেয়েছিলেন। অবশ্য তাঁর ও অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির ‘কবি-লড়াই’ হয়েছিল কি না, তা নিয়ে মতবিরোধও আছে। আজও আছে তাঁর গ্রাম। এখানে হয় কালীপুজোও। যাবেন না কি সেই গ্রামে?
গ্রাম বলতে উঠে আসে দু’টি গ্রামের কথা। অবাক হচ্ছেন? আরও অবাক হবেন ভোলা ময়রার অন্য আরেকটি ‘মিষ্টি’ পরিচয় শুনলে। যারা অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, ভোলা ময়রার কথা জানতেন না,তাঁরাও জেনেছেন ‘এন্টনি ফিরিঙ্গি’, ‘জাতিস্মর’ চলচ্চিত্র দেখে। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’র কথা জানেন অনেকে। তাঁর কাজই যে ‘আলো’র মতো। আর তাঁর নামেই পরিচিত বউ বাজারের ‘ফিরঙ্গি কালীবাড়ি’। তবে জেনে নেওয়া যাক ভোলা ময়রাকে নিয়েও। উল্লেখ্য, ভোলা ময়রাকে নিয়েও হয়েছে চলচ্চিত্র। সেই চলচ্চিত্রের নামও ছিল ‘ভোলা ময়রা’।
রসগোল্লার জনক নবীনচন্দ্র দাস। তাঁর দাদাশ্বশুর ছিলেন ময়রা ও কবিয়াল ভোলা। তিনি পেশায় ময়রা বলে তাঁর নামের সঙ্গে পদবী’র জায়গায় জুড়ে গিয়েছিল ‘ময়রা’। তাঁর আসল পদবী নায়েক। আর পুরো নাম ভোলানাথ। নদিয়া, হুগলি এবং বর্ধমান এই তিনটি জেলার সংযুক্তস্থল ‘গুপ্তিপাড়া’। এখানেই জন্ম ভোলা ময়রার। হাওড়া থেকে এখানে ট্রেনে যাওয়া যায় ব্যাণ্ডেল-কাটোয়া লাইন ধরে। এখানেই না কি প্রথম তৈরি হয়েছিল মাখা সন্দেশ। পরবর্তী সময়ে সেই মাখা সন্দেশ থেকেই হয় ‘গুপো সন্দেশ’।
এবারে আসা যাক আরও এক জায়গার কথায়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার জাড়া রাজবাড়ি’র কথায়। এখানে কবিগানের লড়াই করতে এসেছিলেন ভোলা ময়রা। তাঁর প্রতিযোগী না কি ছিল ওই এলাকার বাসিন্দা যজ্ঞেশ্বর ধোপা। এখানে শ্যুটিং হয়েছিল ‘এন্টনি ফিরিঙ্গি’ চলচ্চিত্র। এসেছিলেন উত্তমকুমার। ‘এন্টনি ফিরিঙ্গি’ চলচ্চিত্রে রাজবাড়িতে যে কবিগানের লড়াই দেখা যায়, তা এখানেই শ্যুট করা হয়েছিল।
এই রাজবাড়িতে এসেছিলেন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও। রায় জমিদার বাড়ি বলেও পরিচিত জাড়া বাড়ি। পূর্বপুরুষ রামগোপাল রায় এই বাড়িতে প্রথম কালীপুজোর (KALI PUJA) প্রচলন করেছিলেন। তিনি রাজা ছিলেন না। ইংরেজদের কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধি পেয়েছিলেন তাঁর পুত্র রাজীব লোচন রায়। জানা গিয়েছে, এই বংশের আসল পদবী রায় নয়। পদবী ছিল গঙ্গোপাধ্যায়। বর্ধমান রাজার জমিদারি রক্ষার কাজ নিয়ে এই গ্রামে এসেছিলেন জনৈক ব্রাহ্মণ। তিনি পরবর্তীকালে এখানেই থেকে যান। জমিদার হয়ে উঠেছিলেন। তিনিই উপাধি পেয়েছিলেন ‘রায় বাহাদুর’। আরও জানা গিয়েছে, তিনি নিজের পরিচয় দিতেন রামগোপাল রায় হিসেবে।
অনেকের দাবি, স্থানীয় কবিয়াল ভোলা ময়রাকে দেখেই চলচ্চিত্রের পর্দায় ফুটে উঠেছিল ‘ভোলা কবিয়াল’। উল্লেখ্য, জাড়া রায় বাড়ির কুলদেবতা গোপাল। রামগোপাল রায় প্রচলন করেছিলেন দুর্গাপুজোরও।