নিসর্গ নির্যাস মাহাতো : কর্ণগড় (Karnagarh)। ব্রিটিশ ভারতের সম্ভবত প্রথম রাজনৈতিক বন্দিনী রানি শিরোমণি (Shiromani)। পারাং নদী ঘেরা প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ- গড়, তাঁর নামেই ‘রানি শিরোমণি গড়’। কর্ণগড়ের দু’টি মন্দির- মহামায়া ও দণ্ডকেশ্বর আগেই পেয়েছিল রাজ্য সংরক্ষিত সৌধের মর্যাদা। এবারে বর্তমান সংরক্ষিত ‘রানি শিরোমণি গড়’ – এর ভেতরে একটি জরাজীর্ণ মন্দির (জনশ্রুতি, শীতলা মন্দির) ও বাহিরমহল এসেছে স্টেট প্রটেক্টেড মনুমেন্ট- এর তালিকায়। বিশেষ জায়গা চিহ্নিত করে, আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা হতে পারে হেরিটেজ জোন। এবাদেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাচীন গড় ও আরও দু’টি প্রাচীন মন্দির।
রাজ্য সরকারের (State Government) প্রাকৃতিক কেন্দ্রের তালিকায় সম্প্রতি স্থান পেয়েছিল কর্ণগড়ের রানি শিরোমণি গড়। ধর্মীয় ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের তালিকায় স্থান পেয়েছিল কর্ণগড় (মূল মন্দির)। প্রসঙ্গত, এই মহামায়া মন্দির চত্বরে বসেই শিবায়ন রচনা করেছিলেন কবি রামেশ্বর ভট্টাচার্য। রাজ্যের পর্যটন তালিকায় রয়েছে রানি শিরোমণি (RANI SHIROMANI) গড়। এখানে রয়েছে সারি সারি ওষধি গাছ। ভালোবাসি কর্ণগড়, হেরিটেজ জার্নি, রানি শিরোমণি ঐক্য মঞ্চের আবেদন- হেরিটেজ সার্কিটেও স্থান পাক কর্ণগড় ও রানি শিরোমণি গড়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রানি শিরোমণি গড়ে নির্মাণ করা হবে স্মৃতি স্তম্ভের। সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন পর্যটকরা।
এখানে চার ধরণের প্রায় ৯ টি কটেজ রয়েছে। বাঁশ, মাটি, পাথর এবং কংক্রিট- এই চার ধরণের কটেজ রয়েছে। বিশেষ বিশেষ সময়ে কটেজ বুকিংয়ে ছাড় দেওয়া হয় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এখানে রয়েছে পিকনিকের ব্যবস্থাও। আছে ক্যাফেটেরিয়া। বিশেষ অনুষ্ঠানও পালন করা যায় এখানে। আর গড়ের বাইরে রয়েছে মনোমুগ্ধকর পারাং নদী।
চাইলেই পুজোর দিনে ঘুরে আসতেই পারেন এই ঐতিহাসিক গড়ে। আর অন্যরকম পুজো দেখতে চাইলেও আসতে পারেন ঐতিহাসিক কর্ণগড় মন্দিরে। এখানের ‘মহামায়া’ আরাধনা হয় প্রাচীণ ঐতিহ্য মেনেই। আজও আছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। মন্দিরের কাছেও রয়েছে থাকার ব্যবস্থা। কাছেই রয়েছে (ডাঙরপাড়া ও বালিজুড়ির কাছে) জঙ্গল শা বাবা। হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের উপাস্য তিনি।
কর্ণগড় মন্দিরের সামনেই রয়েছে ‘পণ্ডা’ পরিবার। তাঁদের পূর্বপুরুষ উপাসনা করতেন রাজ পরিবারের জগন্নাথ- বলরাম- সুভদ্রা’র। এখনও তাঁদের বাড়িতে রয়েছে প্রাচীন সেই বিগ্রহ। পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, তাঁদের পদবী ছিল ‘চক্রবর্তী’। তবে জগন্নাথ দেবের উপাসনা করার জন্য রাজা তাঁদের ‘পণ্ডা’ উপাধি দিয়েছিলেন। দেখে আসবেন না কি ঐতিহাসিক এই গড়? পাথরের খাঁজে খাঁজে খুঁজে পাবেন, ইতিহাসের ফিসফাস। কটেজ বুক করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ৮৫০৯৯৪৬০৪৬ নম্বর বা tourism.paschimmedinipur@gmail.com -এই মেল আইডিতে। বুকিং করতে পারেন https://tourism.paschimmedinipur.net/booking -সাইটে গিয়েও।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে যে কোনও ট্রেনে মেদিনীপুর স্টেশন। স্টেশন থেকে নেমে গাড়ি ভাড়া বা বাস ভাড়া করে ভাদুতলা। সেখান থেকে গাড়ি বা টোটো করে গেলেই কর্ণগড়। মেদিনীপুর শহর থেকে কর্ণগড় যেতে সময় লাগবে প্রায় ২৫ মিনিট।