নিজস্ব প্রতিনিধি: গঙ্গাসাগর (GANGA SAGAR) এবং কপিল মুনির (KAPIL MUNI) আশ্রমের উল্লেখ পাওয়া যায় ‘সংবাদপত্রের সেকালের কথা’ বইতেও। ব্রজেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই বই প্রকাশিত হয়েছিল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে। সালটা ১৯৩৩। ওই বইতেই রয়েছে, ‘হরকরা’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবর। তাতে লেখা, ৪৩৭ খ্রিস্টাব্দে কপিল মুনির মন্দির নির্মিত হয়েছিল।
রামচন্দ্র ছিলেন ইক্ষাকু বংশের রাজা। তাঁর পূর্ব পুরুষ ছিলেন রাজা সগর। সগর রাজ একবার অশ্বমেধ যজ্ঞ করার মনস্থির করেন। সেই যজ্ঞ শতমেধ অশ্বমেধ যজ্ঞ। বিশ্বাস ছিল, যিনি এই যজ্ঞ সম্পূর্ণ করতে পারবেন, তিনি সমগ্র পৃথিবীর শাসক হবেন। তাঁর আগে একমাত্র এই যজ্ঞ করতে পেরেছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র।
সগর রাজ শতমেধ যজ্ঞ করবেন, সেই খবর পৌঁছেছিল দেবরাজের কাছে। আর এতেই ভীত হয়ে পড়েন ইন্দ্র। তাহলে যে তিনি মর্যাদা হারাবেন! তাই রাজা সগরের ঘোড়া চুরি করে ইন্দ্র তা লুকিয়ে রেখে আসেন কপিল মুনির আশ্রমে। এদিকে যজ্ঞের ঘোড়া খুঁজে না পেয়ে রাজা তাঁর ৬০ হাজার পুত্রকে নির্দেশ দেন ঘোড়া খোঁজার। সমস্ত পুত্র তাণ্ডব চালাতে থাকেন সর্বত্র। অবশেষে তাঁরা পৌঁছন কপিল মুনির আশ্রমে। দেখতে পান যজ্ঞের ঘোড়া। তখন ধ্যানমগ্ন কপিল মুনি। এতক্ষণ সব ঠিক ছিল। কিন্তু অহংকারী রাজপুত্ররা মুনির ধ্যান ভঙ্গ করে কিছু না জেনেই তাঁকে অপমান করেন। এতেই ক্রুদ্ধ হন মুনি। চোখ মেলে তাঁর তেজ রশ্মি দিয়ে ভস্ম করেন ৬০ হাজার রাজপুত্রকে। তাঁদের আত্মাকে নিক্ষেপ করেন নরকে।
আরও পড়ুন: পুরাণ থেকে সাহিত্য, গঙ্গাসাগরের ইতিকথা
দীর্ঘ বছর পরে সগর রাজার বংশধর অংশুমান, কপিল মুনির আশ্রমে গিয়ে যজ্ঞের ঘোড়া দেখতে পান। এরপর মুনিকে তুষ্ট করতে শুরু করেন তপস্যা। তাঁর তপস্যায় মুগ্ধ হয়ে কপিল মুনি ঘোড়া নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। অংশুমানকে মুনি বলেন, গঙ্গার পবিত্র জলে শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করলে সগর রাজার ৬০ হাজার পুত্রের আত্মা মুক্তি পাবে। তার মানে গঙ্গাকে আনতে হবে মর্ত্যে। তবে অংশুমান এবং তাঁর পুত্র দিলীপ সেই কাজে অসমর্থ হন।
সেই অসাধ্য সাধন করেছিলেন দিলীপের পুত্র রাজা ভগীরথ। তিনি প্রথমে সাধনা করেছিলেন প্রজাপিতার। পরে সাধনা করেছিলেন বিষ্ণুর। উল্লেখ্য, বিষ্ণুর অবতার কপিল মুনি। ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে সন্তুষ্ট করে রাজা ভগীরথ অনুমতি পেয়েছিলেন গঙ্গাকে মর্ত্যে নিয়ে আসার। তবে বিষ্ণুর সতর্ক বাণী ছিল, গঙ্গা’র গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পৃথিবী।
তা শুনে রাজা শরণাপন্ন হন দেবাদিদেব মহাদেবের। প্রার্থনা জানালেন, শিব যেন গঙ্গাকে জটায় ধারণ করেন। তাহলেই গতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এরপরেই নীলকণ্ঠ নিজের জটায় ধারণ করেন গঙ্গাকে। গতি হ্রাস পায়। গঙ্গা অবতরণ করেন মর্ত্যে। সেই জলে রাজা ভগীরথ শ্রাদ্ধকার্যাদি সম্পন্ন করেন সগররাজের ৬০হাজার পুত্রের। মুক্ত হন ভগীরথের পূর্ব পুরুষরা।
আরও পড়ুন: নাগা সন্ন্যাসী মানে ‘ন্যাংটো’ নয়, তাঁদের জীবনযাপন জেনে নিন…
বিশ্বাস, রাজা সগরের নাম থেকেই এসেছে সাগর নামটি। তাঁর পূর্ব পুরুষ রাজা ভগীরথের নাম থেকেই গঙ্গার নাম ভাগীরথী। আর সাগর এবং নদীর মধ্যিখানের দ্বীপের নাম সাগরদ্বীপ। এখানেই প্রতি বছর নদী ও সাগরের মিলনস্থানে মকর সংক্রান্তির সময়ে বিশেষ মুহূর্তে পূণ্যস্নান করেন লক্ষ লক্ষ ভক্ত-সাধক। বিশ্বাস, এই স্নানে সমস্ত পাপের বিনাশ হবে। মিলবে মোক্ষ। ভক্তরা পুণ্যস্নানের পরে পুজো দেন কপিল মুনির আশ্রমে।
দেখা মেলে নাগা সন্ন্যাসী, নাগা সন্ন্যাসিনী, বাল নাগাদের। প্রথমে ইষ্ট দেবতাকে স্নান করান নাগা সন্ন্যাসী- সন্ন্যাসিনীরা। তারপরে নিজেদের অস্ত্রকে স্নান করান। সব শেষে মোক্ষের আশায় নিজেরা স্নান করেন।
দ্বিতীয় পর্ব- পূণ্যস্নান